‘পরিবেশ দিবস পালনে ব্যবহৃত হয় পরিবেশবিধ্বংসী উপাদান’

প্রতিবছরের ৫ জুন বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় পরিবেশ দিবস। পরিবেশদূষণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে দিবসটি পালন হলেও, এসব দিবস পালনে ব্যবহার করা হয় পরিবেশ ধ্বংসকারী বিভিন্ন উপাদান। তাই ‘পরিবেশ দিবস হোক পরিবেশবান্ধব’ পালন করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্যোগ অনুধাবন ও চন্দ্রকলি।

মঙ্গলবার (৩০ মে) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান। এতে মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন ঢাবির ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের সম্মানিত পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক ড. দিলারা জাহিদ।

মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া বলেন, আমরা পরিবেশ দিবসে পিভিসি ব্যানার তৈরি করি, যা পরিবেশবান্ধব নয়। প্রোগ্রাম শেষে এগুলো ফেলে দেওয়া হয়। ফলে এগুলো খালে-নদীতে গিয়ে পরিবেশ দূষণ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমরা বোতলজাত পানি পরিবেশন করি, যা প্লাস্টিকের। আমরা প্লাস্টিক বর্জনের কথা বললেও তা বাস্তবে পালন করি না। আমরা একটু সচেতন হলেই আমাদের পরিবেশ ভালো রাখতে পারি। যেমন পিভিসি ব্যানারের পরিবর্তে আমরা কাপড়ের ব্যানার তৈরি করতে পারি, প্লাস্টিকের বোতলে পানি পরিবেশন করার পরিবর্তে পানির পরিবেশবান্ধব পাত্র রাখতে পারি বা অন্য কোনও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তি-সমাজের অসচেতন, দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড কিংবা তথাকথিত উন্নয়নের থাবায় বিনষ্ট হচ্ছে সবুজ পরিবেশ। ব্যক্তি, সমাজ, প্রতিষ্ঠান আমরা নিজেরা সমান না হওয়ায় আমরা পরিবেশের বিনাশের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বিনাশ ডেকে আনছি। সেখানে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্যোগে এক কথায় অনবদ্য অসাধারণ। ইনডোর প্লান্টস দিয়ে আমরা ঘরের ভেতরটাও সবুজ করতে পারি, করতে পারি বাগান। সবুজে রাখতে পারি আমাদের আঙিনা।

পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রিয়জনকে উপহার হিসেবে দিতে পারি চারাগাছ, পাশের রাস্তা-মাঠ-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা সবুজ করার দায়িত্বও নিতে পারি আমরা। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, গাছের যে চারা রোপণ করলাম, তা সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কি না। দুর্যোগ অনুধাবন ও চন্দ্রকলির উদ্যোগে এ বছর দেশের প্রতিটি জেলায় দেশীয় প্রজাতির ছয় বিলুপ্তপ্রায় গাছের চারা রোপণ করা হবে। যেকোনও স্বেচ্ছাসেবী ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে অংশ নিতে পারবে। এই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমাদের কর্মসূচি শুরু হবে। কোনোক্রমেই আমরা সেখানে ব্যানার ব্যবহার করবো না, বলেন তিনি।

ড. দিলারা জাহিদ বলেন, অনেক সময় ছোট একটি ভাবনা সমাজকে বদলে দিতে পারে। পরিবেশ দিবস হোক পরিবেশবান্ধব। এটা যদি আমরা অনুধাবন করতে পারি এবং সত্যিকার অর্থে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে ইতিবাচক হতে পারে। শুধু পরিবেশ দিবস নয়, সব আয়োজনই পরিবেশবান্ধব করার চেষ্টা করতে হবে।

তিনি বলেন, শিশুদের ভালো কাজ শেখালে, পরিবেশবান্ধব চিন্তা করতে শেখালে তারাই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এসি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা হয়তো সাময়িকভাবে আরামে থাকছি, কিন্তু তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং তা সামগ্রিকভাবে পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

দুর্যোগ যোগাযোগ ইউনিটের সমন্বয়ক মাসুমা মরিয়মের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন চন্দ্রকলির সমন্বয়ক শাখাওয়াত উল্লাহ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্যোগ অনুধাবনের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ কবির হোসেন।