আমার জীবনে আমার পরিবার, শিক্ষক, স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী ও সাধারণ মানুষ যাদের অবদান আছে, তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ, বাংলা ট্রিবিউনকে এ সব কথা বলেন মাহমুদুল হক মনি, যার নামে গত ৪ আগস্ট ইংল্যান্ডের সাসেক্স ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে ‘ব্রিটিশ লাইব্রেরি ফর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ নামে একটি কর্নার তৈরি করা হয়েছে। আর এই লাইব্রেরি উন্নয়ন বিষয়ক বই সংগ্রহের হিসেবে পৃথিবীর অন্যতম এক লাইব্রেরি। আর এ লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে এই বাংলাদেশেরই কিছু কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ!
মাহমুদুল হক মনি নামের সেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটি একইসঙ্গে গর্ব, আনন্দের অনুভূতি! এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন তার এ অর্জনের পেছনের গল্প। জানালেন তার নিজের গল্পও।
মাহমুদুল হক মনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (প্রশাসন)একজন সদস্য। বর্তমানে শিভেনিং স্কলারশিপে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সে ‘গভর্নেন্স ও উন্নয়ন’ বিষয়ে মাস্টার্স করছেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেছেন। একইসঙ্গে তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সমালোচক, গবেষক এবং সৌখিন ফটোগ্রাফারও।
নিজের কিছু কাজের স্বীকৃতির জন্যই তার এ অর্জন বলে মনে করেন মাহমুদুল হক মনি।এর মধ্যে প্রধান তিনটি কারণ হলো- এই লাইব্রেরিটা যখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন বন্ধ না হওয়ার জন্য একটি শর্ট ভিডিও বানিয়েছিলাম।এর ফলে আইডিএস (ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ) স্বল্প ফান্ডে হলেও লাইব্রেরিটি চালু রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
এই তিনটি বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে ‘মনি কর্নার’-এ। এ কর্নারে কিছু বাঁধাই করা ছবিসহ দুটি অ্যালবামে এক বছরে যুক্তরাজ্যে তোলা ২৮০টি আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। রয়েছে বাংলাদেশের পতাকাও। এছাড়া পুরো লাইব্রেরি জুড়ে আরও ১৭টি ছবি টাঙানো হয়েছে দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য। ২০১১ সালে ২৯তম বিসিএসের মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন মনি। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন পলিসি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত থাকতে উন্নয়ন ও গভর্নেন্স পড়ার একটা আগ্রহ জন্মে। গত বছর বান্দরবান সদরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় আমি ইংল্যান্ডের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে ‘গভর্নেন্স ও উন্নয়ন’ বিষয়ে মাস্টার্সের জন্য আবেদন করি।
এ সময় যুক্তরাজ্য সরকারের শিভেনিং স্কলারশিপের জন্যও আবেদন করেন তিনি। পরে এ স্কলারশিপের জন্য মনোনীত হলে পড়তে যান সাসেক্সে।
তিনি বলেন, আইডিএস উন্নয়ন শিক্ষা ও গবেষণার জন্য পৃথিবীতে অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান।এ প্রতিষ্ঠান থেকে উন্নয়ন অধ্যয়নের অনেক মাইল ফলক গবেষণা হয়েছে। গত এক বছরে এই প্রতিষ্ঠান আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।এই প্রতিষ্ঠান আমাকে গরিব, অসহায় ও প্রান্তিক জনগণের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা দেখাতে শিখিয়েছে।
আমি মনে করি, সরকারি চাকরিতে মানুষের উপকার করার অনেক সুযোগ আছে, যা আমি দেশে গিয়ে বেশি করে কাজে লাগাবো বলেন, মাহমুদুল হক।
সরকারি চাকরিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও ফটোগ্রাফির নেশাও রয়েছে তার। মাহমুদুল হক মনি বলেন, ২০০৮ সালে ফটোগ্রাফি শিখেছি। যদিও প্রথম দিকে ছবি তুলে টাকা উপার্জন করলেও গত কয়েক বছর ধরে শুধু শখের বশে ছবি তোলা। তবে আমার ছবি বাংলাদেশ ও নরওয়েতে প্রদর্শিত হয়েছিল।কিছু স্বীকৃতিও পেয়েছিলাম।আর যুক্তরাজ্যে এসেও একটা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছি।
তবে এসব স্বীকৃতি খুব বেশি অর্থ বহন করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমার ছবি তোলা যদি মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগায়, ভিন্ন কোনও গল্প বলতে পারে, কোনও প্রতিষ্ঠানের ভালো উদ্যোগে কাজে লাগে, মানুষের কাজে লাগে, তবেই এর সার্থকতা। আর চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে যুক্ত ছিলাম। কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্রও বানিয়েছি। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক সিতারা পারভীনের ওপর বানানো চলচ্চিত্র ‘মৃত্তিকার মতো তুমি আজ’’ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা।
যারা বিদেশে আরও পড়তে চান তাদের উদ্দেশে মনি বলেন, যারা যুক্তরাজ্যে পড়তে আসতে চান, তারা শিভেনিং ও কমনওয়েলথের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়েগুলোর বিভিন্ন স্কলারশিপগুলোতে আবেদন করতে পারেন। আর এখানে এসে লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগকে কাজে লাগালে নিজের দক্ষতা যেমন বাড়বে, তেমনি নতুন বন্ধুও তৈরি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক শিক্ষার্থী সংগঠন থাকে সেখানে কাজ করলে অথবা কোনও সংগঠনে স্বেচ্ছায় বা স্বল্পবেতনে চাকরি করলেও অভিজ্ঞতা বাড়ে। মনে রাখা ভালো যে, এখানে আসলে লেখাপড়াটা নিজের কাছে। আপনি যত শিখতে চাইবেন, ততই পারবেন। এখানে শিক্ষকরা জোর করে আপনাকে পড়াবে না। নিজেকেই নিজের পড়া ও লেখা তৈরি করতে হবে। ফাঁকিবাজি করলে নিজেরই ক্ষতি।
/জেএ/এবি/আপ-এনএস/