নগরবাসী মাত্রাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করে: ঢাকা ওয়াসার এমডি

নগরবাসী হাত-মুখ ধোয়া ও গোসলে মাত্রাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করে। এ কারণে পাইপলাইনের পানি সরাসরি পানযোগ্য করে বানাতে গেলে সেটার অপচয় হবে, খরচও বাড়বে। বৃহস্পতিবার (৫ মে) রাজধানীর ওয়াসা ভবনে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানালেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এম তাকসিম খান।

 

বাংলা ট্রিবিউন: ওয়াসার পানি না ফুটিয়ে আদৌ কোনোদিন পান করা সম্ভব হবে?

এম তাকসিম খান: আমরা বলি ওয়াসার পানি ড্রিংকেবল ওয়াটার, ড্রিংকিং ওয়াটার নয়। ড্রিংকিং ওয়াটার হচ্ছে বোতলজাত পানি। ওয়াসার পানি ড্রিংকিং লেভেলে আসার সম্ভাবনা নেই। ড্রিংকিং ওয়াটার করতে গেলে অনেক কিছু মেশাতে হয়। এতে খরচ বাড়ে। সেটা করা সম্ভব নয়। ৯৫ শতাংশ পানি এখন পানযোগ্য। আমরা বলি, আপনারা যে পানিটা পান করবেন শুধু সেটা ফোটান। সব পানি তো ফোটাতে হবে না। ব্যবহারের মাত্র তিন শতাংশ পানি বাসাবাড়িতে ফোটানো হয়।

লাইনের সব পানি ড্রিংকিং ওয়াটার করা হলে তাতে খরচ বাড়বে। কিন্তু সেটা তো অপচয়ও হবে। কারণ সেই পানিই তো আবার টয়লেট ও গোসলে ব্যবহার করা হবে।

এদিকে আবার বড় সমস্যা হচ্ছে নগরবাসী অতিরিক্ত পানি খরচ করে। হাত-মুখ ধোয়া ও গোসলে মাত্রাতিরিক্ত পানির অপচয় হয়। পানি অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু আমরা এর যথেচ্ছ ব্যবহার করছি।

 

বাংলা ট্রিবিউন: সম্প্রতি ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ওয়াসার পরীক্ষায় পানিতে কোনও সমস্যা পাওয়া গেছে?

এম তাকসিম খান: গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়ে থাকে। যেহেতু ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ, তাই আমরা সচেতনতা অবলম্বন করেছি। আইসিডিডিআর,বি যেসব জায়গায় পানিতে সমস্যার কথা বলেছে, সেসব এলাকার পানির ল্যাব টেস্ট করানো হয়েছে। মোটাদাগে কোনও বিশেষ ব্যত্যয় পাইনি। ৫-৬ শতাংশ কন্টামিনেশন পাওয়া যায়। সেটাই পাওয়া গেছে। বড় সমস্যা পাইনি।

তারপরও সাবধানতা হিসেবে আমরা আমাদের ক্লোরিনেশনের মাত্রা বাড়িয়েছি। যদি পাইপে কোনও সমস্যাও থাকে, এ প্রক্রিয়ায় সেই জীবাণুও মরে যাবে। যে জায়গায় প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে, সেই এলাকার পানি আমরা বিরতিহীন মনিটরিং করছি। রেগুলার পরীক্ষা করছি।

 

বাংলা ট্রিবিউন: পানির লাইনের সমস্যা হলে কী ধরনের সমাধানে আপনারা তৎপর থাকেন?

এম তাকসিম খান: সোর্সে পানি একশ ভাগ সুপেয় থাকে। পানি ছাড়ার পর তা যায় টারশিয়ারি লাইনে। সেখান থেকে বাসাবাড়ির সার্ভিস লাইনে। সেখানেই সমস্যা হয়। পানির যখন প্রেসার থাকে তখন লাইনে ফুটো থাকলেও বিশেষ সমস্যা হয় না। কিন্তু পানির চাপ কম থাকলে লাইনে অন্য জিনিসও ঢুকে পড়ে। আর ওই ফুটো যদি কোনও ড্রেনের পাশে হয়, তবে ড্রেনের আবর্জনাও লাইনে ঢুকবে।

আমরা ঢাকা নগরীর সমস্ত পানির লাইন পরিবর্তন করছি। ডিএমএ ডিস্ট্রিক্ট মিটার এরিয়া সিস্টেমে যাচ্ছি। এই সিস্টেমে এ সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। পুরো ঢাকা ভাগ করা হবে ১৫০টি ভাগে। এখন পর্যন্ত ৭০টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান। ডিএমএ’র কাজ সম্পন্ন হলে লিক সমস্যা, দূষণ সমস্যা হবে না।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরও ১৬টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে নতুন কর্ম পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

 

বাংলা ট্রিবিউন: নতুন ১৬টি ওয়ার্ডের পানি সরবরাহের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

এম তাকসিম খান: ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে মাস্টারপ্ল্যানের কাজ চলছে। ওখানে ডিএমএ হবে। নতুন আরেক সিস্টেমে নতুন ব্যবস্থাপনা চালু হবে ওই ১৬ ওয়ার্ডে। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে পানির চাহিদা সম্পর্কে গবেষণা করা হচ্ছে। কনসালট্যান্সি ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে। পানি ও পয়োবর্জ্যের বিষয়ে তারা সার্ভে করেছে। সার্ভের কাজ মোটামুটি শেষ। আমরা মন্ত্রণালয় দিয়েছি। একনেকে পাস হলে পরের ধাপের কাজ শুরু করবো। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকারও বেশি।

 

বাংলা ট্রিবিউন: ঢাকার অঞ্চলভেদে পানির তারতম্যের গবেষণার সর্বশেষ কী তথ্য রয়েছে?

এম তাকসিম খান: সরকারের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে অত্যন্ত ভালো পরামর্শ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন এলাকায় মৌজার ওপর ভিত্তি করে সরকারি পানির দাম রয়েছে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। যে মৌজায় যে রেট সে অনুযায়ী পানির দাম ঠিক হবে। এ কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। পাইলটিং শুরু হবে জুনের মধ্যে।

 

বাংলা ট্রিবিউন: দাসেরকান্দি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কবে নাগাদ চালু হবে?

এম তাকসিম খান: দাসেরকান্দি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। চীনা প্রতিষ্ঠান কাজটি করেছে। হাতিরঝিলের যে সমস্ত বর্জ্য আমরা বাইপাস করেছি, সেগুলো যাচ্ছে ওখানে। সেখানে ট্রিট করার কথা। এ কাজ প্রায় শেষ। চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। ট্রিটমেন্ট চলছে, ট্রায়াল রান চলছে। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে জুলাই কিংবা অগাস্টে। দাসেরকান্দিতে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল তা থেকে অতিরিক্ত খরচ হয়নি। টোটাল কস্ট কমেছে।