বাংলা ট্রিবিউনকে বিএসএফ সাউথ বেঙ্গলের আইজি

‘সীমান্তে যারা নিহত হচ্ছে তারা অপরাধী’

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সাউথ বেঙ্গলের আইজি অতুল ফুলজেলে বলেছেন, সীমান্তে বিভিন্ন সময় যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে তারা অপরাধী। বিএসএফ আত্মরক্ষার স্বার্থে গুলি চালায়। তারা কোন দেশের নাগরিক, সেটি আমাদের কাছে বিবেচ্য নয়। সম্প্রতি কলকাতায় রাজারহাটে বিএসএফ সাউথ বেঙ্গলের আইজি কার্যালয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

 

বাংলা ট্রিবিউন: বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশিদের হত্যা করে এমন অভিযোগ প্রচুর।  সীমান্ত হত্যা বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

অতুল ফুলজেলে: বিএসএফ গুলি করে মানুষ হত্যা করে—এ অভিযোগ ঠিক নয়। কী কারণে গুলি করা হয়েছে কিংবা কী কারণে নিহত হয়েছে বিভিন্ন সময় সঠিক তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হয় না।  সীমান্তে অপরাধ তৎপরতায় যারা জড়িত তারা সশস্ত্র। বিএসএফ সদস্যরা সীমান্তে আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এছাড়া আমরা ননলেথাল (প্রাণঘাতী নয়) এমন কার্যক্রম পরিচালনা করি।  সীমান্তে যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় তাদের পরিচয় ভারতীয় বা বাংলাদেশি নয়। তারা অপরাধী হিসেবেই আমাদের কাছে বিবেচিত।

 

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত এলাকা বেশি। সমস্যা সমাধানে বিএসএফের পক্ষ থেকে কী ধরনের কার্যক্রম নেওয়া হয়?

অতুল ফুলজেলে: বাংলাদেশ আমাদের পরম বন্ধু। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ— বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কোনও সমস্যা হলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে। অনেক সময় আত্মরক্ষার কারণে গুলি চালানো হয়। সীমান্তে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দুদেশের অপরাধীদের তালিকা আদান প্রদান করা হয়।

 

বাংলা ট্রিবিউন: সীমান্তে দুদেশের যারা চোরাচালান সিন্ডিকেটের মূল হোতা তাদের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে?

অতুল ফুলজেলে: বিজিবির-বিএসএফের মধ্যে চোরাচালানকারীদের তথ্য আদান-প্রদান হয়। আমরা তদন্ত করি না। আমরা সীমান্ত নিরাপত্তায় কাজ করি। আমাদের নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স অনুযায়ী যে তথ্য পাই সে অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করি।

 

বাংলা ট্রিবিউন: চোরাচালানের সঙ্গে সীমান্তে বসবাস করা লোকজনদের জড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কতটুকু দায়ী বলে মনে করেন?

অতুল ফুলজেলে: সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকার কারণেই চোরাচালানকারীরা তাদের টার্গেট করে। তাদের দিয়ে চোরাচালানের সুযোগ খোঁজে। চোরাকারবারিরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিদের এসব কাজে ব্যবহার করে থাকে। সীমান্তের লোকজনের সহায়তায় পাচারের ঘটনা ঘটছে।

 

বাংলা ট্রিবিউন: সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার কী কারণ?

অতুল ফুলজেলে: বাংলাদেশ থেকে চোরাচালানকারিরা ভারতের স্বর্ণপাচার করছে। অধিক মুনাফার কারণে অনেকেই স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত। আয়তনে ছোট, শরীরের যে কোনও জায়গায় ঢুকিয়ে কিংবা পেঁচিয়ে আনা-নেওয়া করা যায়। সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া এগুলো নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন।

তবে সম্প্রতি স্বর্ণ উদ্ধারের বিষয়ে সাউথ রিজিয়নের সাফল্য রয়েছে। বিশেষ করে গরু চোরাচালান শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে। অনেক জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। অপরাধীরা সেসব জায়গা দিয়েও পাচারের সুযোগ খোঁজে। সেসব এলাকায় আমাদের তৎপরতা আছে।

 

বাংলা ট্রিবিউন: সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দুই বাহিনীর কী ধরনের সমন্বয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়?

অতুল ফুলজেলে: বাংলাদেশ থেকে কোনও বাংলাদেশি নাগরিক যদি ভারতের সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যদি কোনও ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিসের তথ্য না পাওয়া যায় তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একইভাবে কোনও ভারতীয় নাগরিক যদি বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে এবং যদি কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়া যায় তবে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে নির্ধারিত ফ্ল্যাগ মিটিং করে অভিযুক্তদের ফেরত পাঠানো হয়। বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে।

 

বাংলা ট্রিবিউন: সীমান্ত এলাকায় এপার কিংবা ওপার যাই বলি না কেন এসব এলাকায় আত্মীয়-স্বজন দুই এলাকায় রয়েছে। কাছাকাছি থাকার পরও ভিসা প্রক্রিয়ার কারণে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ কম হয়। বিষয়টি সহজ করার কোনও উদ্যোগ আছে কি?

অতুল ফুলজেলে: এটি দুদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচনার বিষয়। তারাই এ বিষয়ে সঠিক বক্তব্য দিতে পারবেন। আমরা সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছি। তবে আমার ধারণা, এ ধরনের কোনও প্রক্রিয়া চালু হলে অবশ্যই সেটা দুদেশের জনসাধারণের জন্য ভালো হবে।