বাংলা ট্রিবিউনকে রানা দাশগুপ্ত

নতুন বছরে ঢাকামুখী রোডমার্চ করবে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ৬ ও ৭ জানুয়ারি ‘চলো চলো ঢাকায় চলো’ স্লোগানে রোড মার্চ করবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এরপর পর্যায়ক্রমে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কয়েক লাখ লোকের মহাসমাবেশ এবং সবশেষ আমরণ অনশনে যেতে চাইছে সংগঠনটি।

বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব তথ্য জানিয়েছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) আলাপকালে তিনি ধর্মীয় সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে সম্ভাব্য আন্দোলনের রোডম্যাপের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

নতুন কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আগামী বছরের ৬ থেকে ৭ জানুয়ারি গোটা বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে ‘চলো চলো ঢাকায় চলো’ স্লোগান দিয়ে রোড মার্চ করবো। সারা দেশ থেকে রোড মার্চ করে ঢাকায় এসে শাহবাগ চত্বর বা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হবো আমরা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দিকে পদযাত্রা করবো। এটা কোনও কাজে না লাগলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটা মহাসমাবেশ করারও চিন্তাভাবনা আছে। সেখানে কয়েক লাখ লোক জমায়েত করার কথা ভাবছি।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মহাসমাবেশে আমাদের কথাগুলো বলার কথা ভাবছি আমরা। এরপরেও কাজ না হলে আমরণ অনশনে যাবো। এসব কর্মসূচির একটাই লক্ষ্য, যাতে আমরা নির্বাচনের আগেপরে এমন কোনও পরিস্থিতি দেখতে চাই না যেখানে সংখ্যালঘুরা নির্বাচন নিয়ে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হবে। সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই।

পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি গত ২৩ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি দাবি করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন নিয়েও ফলাফল পাওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। এসব কারণে হিন্দুরা মনে করে তারা প্রতারিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়নের লড়াইয়ে মাঠে রয়েছি। এর অংশ হিসেবে আড়াই লাখ লোকের সিগনেচার ক্যাম্পেইন করে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিয়েছি গত মার্চ মাসে। একই দাবিতে জুন মাসে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। গত ২২ অক্টোবর দেশব্যাপী গণঅনশন করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের বাইরের সব রাজনৈতিক দল এবং মহলের কাছে আমরা জানান দিতে চাইবো বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছে। আমাদের উদ্বেগ ও দেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি যেভাবে সব রাজনৈতিক দল এবং মানুষকে জানাতে চাই, একইসঙ্গে আজকের বাস্তবতায় গোটা বিশ্ববাসীর কাছেও পরিস্থিতি তুলে ধরতে চাই। লক্ষ্য হলো, দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে উদ্বাস্তু জীবনযাপন যাতে করতে না হয়।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘুদের ‘গনিমতের মাল’ ভাবা এবং সংখ্যালঘুদের জন্ম শুধু কোনও একটি দলকে ভোট দেওয়া- এটা বিবেচনা করাটাও ঠিক হবে না। যারা ভোট নেয়, তারা ভাবে তাদের ভোট না দিয়ে এরা যাবে কোথায়? আমরা এখন অনেক সচেতন। আমরা পরিষ্কার করে বলছি, যে নির্বাচন বা নির্বাচনের ফলাফল সংখ্যালঘুদের স্বার্থ-অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না, সেই নির্বাচনে যোগ দিয়ে আমাদের কী লাভ? ৭৫-এর পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনও নির্বাচনেই আমরা নিরাপত্তা পাইনি। সেগুলো সুষ্ঠু হোক বা কারচুপির নির্বাচনই হোক। আমাদের স্বার্থ-অধিকার নিশ্চিত হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি ঢাকায় এসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কার্যালয়ে এসেছিলেন এবং আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘের একজন প্রতিনিধি এসেছিলেন, কথা বলেছেন। তাতে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ এবার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেছে। আমরা সংখ্যালঘু ইস্যুটাকে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছি। এখন সরকার এবং সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হলো- তারা এটাকে কীভাবে তাদের রাজনীতিতে গ্রহণ করবে।

এদিকে, ১৬ নভেম্বর (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। সংগঠনটির রাজধানীর পুরানা পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হওয়া ওই সভায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ওয়াশিংটনের কাছে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উদ্বেগের কথা জানায়।

সভায় মার্কিন প্রতিনিধি দলকে পাকিস্তান আমল থেকে (১৯৪৭-১৯৭১ সাল) স্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমান সময় পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের নানা অভিযোগ ও উদ্বেগের বিষয়টি জানায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও এসব মানুষ বিভিন্ন ধরনের বঞ্চনা, বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। এর পর ওয়াশিংটনের কাছে সুনির্দিষ্ট সাতটি সুপারিশ করা হয়েছে।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ছয় পৃষ্ঠার দীর্ঘ একটি লিখিত বক্তব্যে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, দেশ ত্যাগ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী তৎপরতা এবং সংখ্যালঘু পরিস্থিতিসহ নানা বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাত সুপারিশ