বাংলা ট্রিবিউনকে জেসমিন জুঁই

শিক্ষা নিয়ে কাজ করে অনেক দূর যেতে চাই

জেসমিন জুঁইজেসমিন জুঁই—বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ইংরেজি সাহিত্যে এই ছাত্রী এক সময় কম্পিউটারের কিছুই জানতেন না। বিজয় বাংলা লেখন পদ্ধতির (সফটওয়্যার) উদ্ভাবক মোস্তফা জব্বার তাকে নিয়ে এসেছেন এই প্রযুক্তির ভুবনে। তার স্বপ্ন, জীবন সংগ্রাম, প্রতিষ্ঠা নিয়ে সম্প্রতি বিজয় ডিজিটালের সেগুনবাগিচার অফিসে বসে কথা হয় জেসমিন জুঁইয়ের সঙ্গে।

বাংলা ট্রিবিউন: শুরুটা কিভাবে হয় এই বিজয় শিশুশিক্ষার?

জেসমিন জুঁই: বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের দুটো সেকশন রয়েছে।  আমি যে কাজটা করছি, সেটা মোস্তফা জব্বারের স্বপ্ন ছিল। সেটি হলো, বাংলাদেশের শিশুরা বই-খাতা ছাড়া স্কুলে যাবে। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি এই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করছিলেন। ওই সময় তিনি এটা বিদেশে গিয়ে দেখতে পান, বিদেশে শিশুরা বই-খাতা ছাড়া লেখাপড়া করছে। তার মনে তখন একটা ভাবনা আসে যে, আমাদের দেশেও যদি শিশুরা বই-খাতা ছাড়া লেখাপড়া করত। এর পরিপ্রেক্ষিতে সবাইকে তিনি কম্পিউটারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন, ট্রেনিং দেওয়া হলো। কিন্তু এসব কিছুর সঙ্গে তিনি অনুভব করলেন সব আছে কিন্তু কনটেন্ট নেই। কিন্তু কনটেন্ট বানাতে তিনি মানুষ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একটা সময় তার সঙ্গে আমার হঠাৎ করেই পরিচয় হলো, ২০০৮ সালের দিকে কাজ শুরু করলাম, স্থায়ীভাবে নিয়োগ পেলাম ২০০৯ সালে। কিন্তু তখনও বুঝতাম না, তিনি কী চান। বুঝতে-বুঝতে বছরখানেক চলে গেল। তখন আমরা একটা সফটওয়্যার মাত্র রিলিজ করেছি। যার নাম বিজয় শিশু শিক্ষা-১। তখন বুঝলাম, আমরা আসলে কী করছি। বুঝতে পারলাম, শিশুতোষ সফটওয়্যার তৈরি করছি। আমাদের নিজেদের প্রোডাকশন হাউজ থেকে তিনটা সফটওয়্যার প্রকাশিত হয়েছে। এখন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) আদলে সফটওয়্যার তৈরি করার কাজে হাত দিয়েছি। দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কাজ হয়ে গেছে।

বিজয় প্রাথমিক শিক্ষা ১

বাংলা ট্রিবিউন: সফটওয়্যারগুলোতে কী কী থাকছে?

জেসমিন জুঁই: শিশুকে যেন বাড়িতে গিয়ে হোমওয়ার্ক, ক্লাসে বসে ক্লাসওয়ার্ক নিয়ে যেন চাপ দিতে না হয়, তারা যেন আনন্দের সঙ্গে লেখাপড়া করে, এ জন্য যা-যা প্রয়োজন, সবই সেখানে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বাচ্চাদের উপযোগী আইকনগুলো আকর্ষণীয় দেখতে। বাংলাদেশকে এখানে রিপ্রেজেন্ট করা হয়েছে। নয়নতারা ফুল, মাছরাঙা দিয়ে আইকন করা হয়েছে। চেষ্টা করেছি, শিশুদের কাছাকাছি যেতে, তাদের মনের খুব কাছে যেন পৌঁছাতে পারি। বিজয় শিশুশিক্ষার সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, কোয়ালিটি। কিছুতেই কোয়ালিটির সঙ্গে আপস করিনি। কারণ, স্বপ্নের সঙ্গে কখনও ব্যবসা চলে না।

ছড়া, কবিতাগুলোতে আমরা সুর বসিয়েছি। যেন শিশুরা একবার-দুবার শুনেই মনে রাখতে পারেন।

আর শুধু যদি শিশুকে মাউসটা চালিয়ে দেওয়া শেখানো যায়,তাহলে অভিভাবককে আর কিছু করতে হবে না। সফটওয়্যারগুলো পুরোপুরি তৈরি করা হয়েছে বাংলায়। এখান থেকে বিজয় শিশুশিক্ষা-১, বাংলা গণিত ও ইংরেজি, বিজয় শিশুশিক্ষা-২, বাংলা, ইংরেজি ও গণিত, বিজয় প্রাথমিক শিক্ষা-১ বাংলা, ইংরেজি ও গণিত। বিজয় প্রাথমিক শিক্ষা-২ বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ক সফটওয়্যার প্রকাশিত হয়েছে। 

এসব সফটওয়্যার দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাঠ্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শত-শত স্কুলের ক্লাসরুম ডিজিটাল করা হচ্ছে।

বাংলা ট্রিবিউন: এগুলো সহজলভ্য হবে কিভাবে?

জেসমিন জুঁই: প্রচার প্রচারণা দরকার। বিভিন্ন জায়গায় যখন মেলা হয়, তখন সেখানে অংশগ্রহণ করি।এছাড়া, মোস্তফা জব্বারের যে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল রয়েছে, সেখানে আমাদের কনটেন্টগুলো চালানো হয়। বর্তমানে শতাধিক স্কুল রয়েছে, যারা আমাদের এই সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।

বিজয় শিশু শিক্ষা প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ

বাংলা ট্রিবিউন: বই-খাতা ছাড়া লেখাপড়ার ধরন বোঝাতে অভিভাবকদের সহযোগিতা কতটা পেয়েছেন? আর বিপত্তি কী কী  হয়েছে?

জেসমিন জুঁই: বাধা-বিপত্তি অনেক এসেছে। এখনও আসছে। অভিভাবকদের বোঝাতে পারি না—বই-খাতা ছাড়াও লেখাপড়া হয়। চেষ্টা করি, আমার মতো করে বোঝাতে। যেমন,  এক বছরে একটা শিশুর পেছনে লেখাপড়ার ব্যয়ভার যত, তার তিনভাগের একভাগও ব্যয় হয় না এখানে। বই-খাতা কিছুই লাগছে না। যখন কোনও অভিভাবক একটি মোবাইল ফোন কেনেন, তখন কিন্তু তিনি চিন্তা করেন না। কিন্তু ৯ হাজার টাকার একটা ডিভাইস কিনতে তিনি চিন্তা করেন হাজারবার।এই চিন্তাটাই আমাকে ফেস করতে হয় সর্বত্র।

তবে, ঢাকার অভিভাবকদের বোঝানো কষ্টসাধ্য হলেও গ্রামের মানুষরা সহজে বুঝে যায়। কারণ ঢাকায় অনেক বেশি প্রতিযোগিতা। ঢাকার স্কুলগুলোর কাছে পৌঁছাতে পারি না, যতটা সহজভাবে গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি। এ সব কারণে যে পরিমাণ কাজ আমি করি, ততদূর আমরা এখনও পৌঁছাতে পারিনি।

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট: কোথায় গিয়ে শেষ করতে চান কর্মযজ্ঞ?

জেসমিন জুঁই: আমি অনেকগুলো পরিকল্পনা করেছি, যেগুলো বেশকিছু টেকনিক্যাল কারণে পারছি না শুরু করতে। যেমন, পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি। এ লেভেলগুলোর যে  সৃজনশীল অংশটুকু বাদ দিয়ে এমসিকিউ যে অংশটুকু রয়েছে, সেটুকু বিজয় ডিজিটাল ডট কম এবং বিজয় একুশে ডট নেটে তুলে দেব। শিশুরা বিনামূল্যে ওখানে গিয়ে ব্রাউজ করবে। তবে, প্রতিদিন কিছু কিছু সৃষ্টি হচ্ছে, এই আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না। এ পর্যন্ত পৌঁছে গেছি আমি। শিক্ষা নিয়ে কাজ করে অনেক দূর যেতে  চাই। যতদূর যাওয়া যায় আমি যাব।

/এমএনএইচ/