কলড্রপ শতভাগ বন্ধ করা কারিগরিভাবে সম্ভব নয়: বিটিআরসির চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) নতুন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। গত ১৪ ডিসেম্বর তিনি এ পদে যোগদান করেন।  এর আগে মহিউদ্দিন আহমেদ বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।

২০২২ সালের নভেম্বরে বিটিআরসির নতুন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ নিয়োগ পান। সে সময় তিনি বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরও আগে ২০১৯ সালের ৩০ মে বিটিআরসিতে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার হিসেবে যোগ দেন প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) ডিগ্রিও নিয়েছেন তিনি। নতুন দায়িত্ব, পরিকল্পনা ইত্যাদি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন মহিউদ্দিন আহমেদ।

বাংলা ট্রিবিউন: নতুন দায়িত্বে এলেন। আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।

প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ: বিটিআরসিতে আমি আগেও ছিলাম (ভাইস চেয়ারম্যান)। ফলে কর্মস্থল নতুন নয়।  দায়িত্বটা নতুন।  সবে দায়িত্ব নিয়েছি। অনেক পরিকল্পনা রয়েছে।  ধীরে ধীরে সেসব নিয়ে কাজ করবো।

বাংলা ট্রিবিউন: মোবাইলে কলড্রপ, নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার মতো ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। এসব সমস্যা দূর করে মোবাইল ব্যবহারকারীদের স্বস্তি দিতে আপনার ভূমিকা কী হবে?

প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ: বর্তমানে মানুষের যোগাযোগের অন্যতম বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে একমাত্র মাধ্যম টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কল আদান-প্রদান ও ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে দাফতরিক ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু এসব কার্যক্রম পরিচালনার সময় কলড্রপ হলে বা নেটওয়ার্ক না পাওয়া গেলে গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে ভুলে গেলে চলবে না যে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মোবাইলের কলড্রপ শতভাগ বন্ধ করা কারিগরিভাবে সম্ভব নয়।  তবে তা কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় রাখা সম্ভব। যাতে সব গ্রাহকের মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার মেয়াদে নতুন কোনও লাইসেন্স দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি, যে লাইসেন্স ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণকে আরও ত্বরান্বিত করবে?

প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ: ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১’-এর ধারা ৩৬ অনুসরণ করে ও সরকার প্রণীত বিধিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স প্রদানের লক্ষ্যে কমিশন থেকে ‘দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (লাইসেন্সিং প্রসিডিওর) রেগুলেশন্স, ২০২২’ প্রণয়ন করা হয়েছে।  বর্ণিত লাইসেন্সিং রেগুলেশন অনুযায়ী, কমিশন থেকে দুটি পদ্ধতিতে লাইসেন্স ইস্যু করা হয়ে থাকে। বিডিং বা অকশন পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইনভাইটেশনের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ এবং উন্মুক্ত লাইসেন্সিং পদ্ধতিতে সারা বছর যেকোনও সময় আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আবেদন গ্রহণ। বেশিরভাগ গাইডলাইনেই লাইসেন্সের সংখ্যা বাজার চাহিদা এবং সেবা প্রদানের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার বিষয়ে সরকার বা কমিশনের মাধ্যমে নির্ধারণ করার বিধান রয়েছে। উভয় পদ্ধতিতে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদনের প্রয়োজন হয়। উল্লেখ্য, বিভিন্ন লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে এর সংখ্যা সরকার সীমাবদ্ধ রেখেছে। সরকারের নীতিমালার আলোকে প্রাপ্যতার ভিত্তিতে আইএসপি লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। কমিশন আগামীতে ফাইভ-জি সার্ভিস চালু করার বিষয়ে কাজ করে চলেছে।

বিটিআরসি সরকারের টেলিকম সেক্টরের উন্নয়নে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।  সরকারের ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে কমিশন নিরন্তর কাজ করে চলেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে এবং জনবান্ধবমুখী যেকোনও কাজেই সরকারের পুনঃসমর্থন ও সহযোগিতা আমরা বরাবরই পেয়েছি এবং আমরা আশাবাদী, এই সহযোগিতা সবসময়ই অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে কমিশন সরকারের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করে আগামীর পথ পাড়ি দেবে।

বাংলা ট্রিবিউন: নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসি'র ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে বলে টেলিযোগাযোগ খাতে একটা কথা চালু আছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাই।

প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ: ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১’-এ কমিশনকে যা ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, কমিশন সে অনুযায়ী যথাযথভাবেই তা প্রয়োগ করেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, কিন্তু প্রচলিত হয়ে গেছে যে বিটিআরসি সরকারের রাজস্ব আদায়কারী একটি সংস্থা। এ বিষয়ে আপনার কোনও উদ্যোগ থাকবে কিনা, যাতে বিটিআরসিকে সবাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবেই বিবেচনা করে?

প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ: ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১’-এর ধারা-২৬ অনুযায়ী, ‘কমিশন তার প্রাপ্য সব ফি, চার্জ, প্রশাসনিক জরিমানা এবং অন্যান্য সব পাওনা, সরকারি দাবি (পাবলিক ডিমান্ড) হিসেবে ‘পাবলিক ডিমান্ডস রিকভারি অ্যাক্ট, ১৯১৩’-এর বিধান অনুযায়ী আদায় করিতে পারবে।’ আইনের এই ধারা অনুযায়ী কমিশনের অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগ সরকারের পক্ষে রাজস্ব আদায় করে থাকে।  

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, টিকটকের কোনও অফিস নেই। দেশে তাদের কোনও নিবন্ধিত কার্যালয় না থাকায়—তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।  দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস চালুর বিষয়ে আপনি কোনও উদ্যোগ নেবেন কি?

প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে বিটিআরসি ইতোমধ্যে একটি প্রবিধান ‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল অ্যান্ড সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ২০২১’ প্রস্তুত করে হাইকোর্টে দাখিল করেছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা পেলে সরকারের যথাযথ অনুমোদনক্রমে তা জারি করে তাদের জন্য রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা যাবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে বাংলাদেশে তাদের অফিস চালু করার বিষয়ে বিটিআরসি থেকে সবসময় চাপ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।  তবে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো—দফতর চালুর বিষয়টি একটি ব্যবসায়িক বিষয় এবং বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো তাদের অপারেশনাল ব্যয় সংকোচন করছে। এ কারণে বর্তমানে দফতর স্থাপন করা সম্ভব নয়।  তথাপি বিটিআরসি থেকে প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে বাংলাদেশে তাদের লোকাল অফিস চালু করার জন্য চাপ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে ধন্যবাদ।

প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।