মালয়েশিয়ায় নিয়োগকর্তারা উদাসীন, সরকার আন্তরিক

অসহনীয় গন্ধে বমি আসার দশা। আছে ইঁদুর ও তেলাপোকার অত্যাচার। ভাঁজ করা পিচবোর্ডের বা ও দেয়ালে ঝুলছে জামাকাপড়। এমন দৃশ্য প্রায়ই ধরা পড়ে মালয়েশিয়ার শ্রম বিভাগের (জেটিকেএসএম) এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালিত অভিযানে।

সম্প্রতি চেরাসের বন্দর তুন রাজাক এলাকায় এক ব্যবসায়ীর নিযুক্ত প্রায় ৪০ জন বিদেশি শ্রমিককে মানবেতর অবস্থায় পাওয়া যায়। শ্রমিকরা কারখানার পণ্যের সঙ্গে তাদের জায়গা ভাগ করে নিতে বাধ্য হয়েছিল। খাটের বদলে তাদের শুতে হতো ভাঁজ করা কার্ডবোর্ডের বাক্সে। যেখানে বাতাস চলাচলও ছিল অপর্যাপ্ত। পাইপের ফুটো দিয়ে পানি আসতো মেঝে পর্যন্ত।

নিয়োগকর্তাদের উদাসীনতার কারণে বাংলাদেশি কিছু কর্মীকে প্রায় তিন মাস খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়েছিল। এ সময় পানি ও বিদ্যুৎ পাননি তারা। মানবেতন এ জীবন যাপন নিয়ে মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় সম্প্রতি।

1

তাতে বলা হয়, দেশটির তামান মেলাতি এলাকায় বাংলাদেশি কিছু শ্রমিক নির্মাণের কাজ করছেন। গত তিন মাস ধরে তারা নোংরা পরিবেশে আছেন। রাস্তার পাশে ড্রেনের ওপর শুধু ফাইবারের ত্রিপল টানিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। যেখানে নেই টয়লেট ও গোসলের ব্যবস্থা।

ওই শ্রমিকরা নিয়োগকর্তাকে বারবার তাদের সমস্যার কথা জানালেও মালিকপক্ষ খোঁজ নেয়নি তাদের।

এ ঘটনায় তামান মেলাতির রেসিডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আজহারি আবদুল তাহারিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিয়োগকর্তা কেমন করে শ্রমিকদের মাসের পর মাস এই অমানবিক পরিবেশে রাখতে পারে? এটা নিশ্চয় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা।’

অতীতেও মালয়েশিয়ার শ্রম দফতরের এমন অভিযানে দেশব্যাপী নিয়োগকর্তাদের বিভিন্ন অপরাধ উন্মোচন করেছে।

জেটিকেএসএম-এর মতে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এই বছরের মার্চ পর্যন্ত ১,২৮৫টি তদন্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৫টি মামলায় বিচার হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১০ লাখ রিঙ্গিত।

4

আরও ৯০৮টি মামলায় মোট এক কোটি রিঙ্গিতেরও বেশি জরিমানা করা হয়েছে। কিছু মামলা প্রক্রিয়াধীন।

জেটিকেএসএমের ডেপুটি ডিরেক্টর-জেনারেল (অপারেশনস) আসরি আবদ ওয়াহাব বলেছেন, জোরপূর্বক শ্রম সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলা করে মালয়েশিয়ার শ্রম ব্যবস্থাপনার উন্নতির চেষ্টা করছে তার বিভাগ। দেশটির শ্রম পরিস্থিতি ‘খুব উদ্বেগজনক’ বলে মনে করছেন তিনি।

বিভাগ বলছে, ‘নিয়োগকর্তারা যে অপরাধ বেশি করেন সেটা হলো আইন-৪৪৬ না মানা। বিশেষ করে যাদের কর্মীর সংখ্যা বেশি আছে তাদের বেশিরভাগই উপযুক্ত আবাসন দিতে ব্যর্থ হয়।’

ওই বিভাগের হিসাব বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত, মালয়েশিয়ার ৩৭,৬৬২ নিয়োগকর্তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ এখনও জেটিকেএসএম থেকে আবাসনের প্রশংসাপত্র পায়নি।

আইন-৪৪৬ অনুযায়ী নিয়োগকর্তা বা আবাসন প্রদানকারীকে জেটিকেএসএম থেকে আবাসনের প্রশংসাপত্র নিতে হবে। এটি না থাকাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এই ধারার মধ্যে কর্মীদের জন্য টয়লেট, বিছানা, রান্না, বিশ্রাম ও খাওয়ার জন্য ইউটিলিটিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

আসরি বলেন, ‘নিয়োগকর্তা এসবের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হলে ৫০ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত জরিমানার শাস্তি কিংবা এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয় শাস্তি পেতে পারে।’

আসরি আরও বলেছেন, গত ২১ মার্চ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রোটোকল ২৯ অনুমোদন করে মালয়েশিয়া। ফলে দেশটির সরকার বিদেশি কর্মীদের কল্যাণ এবং শ্রম অবস্থার উন্নতি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

5

আইএলও বাধ্যতামূলক শ্রমের ১১টি সূচকের রূপরেখা দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কর্মীদের অনুমতি ছাড়া মালিক নিজের দখলে পাসপোর্ট এবং ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র রাখতে পারবে না। শ্রমিকদের পরিবার বা অন্য কোনও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য করতে পারবে না।

এছাড়া কর্মীর লেখাপড়া বা ভাষা না জানা ইত্যাদির দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারবে না নিয়োগকর্তা। কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করতে পারবে না।