মানবপাচারকারীর সঙ্গে কাজ করতে না চাওয়ায় কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশি খুন

মানবপাচারকে কেন্দ্র করে হামলায় কম্বোডিয়ায় জাকারিয়া রেজা নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) রাতে হামলার শিকার হন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে তিন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে সেখানকার পুলিশ। তারা হলেন- শরিফুল ইসলাম, নিশাত ও সাজ্জাদ।

কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাকারিয়া রেজা নামে এক বাংলাদেশি হামলার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। বাংলাদেশিরা তিন জনকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে মর্গে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ সোসাইটির উদ্যোগে আমরা তার চিকিৎসার তদারকি করেছিলাম।’

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ দেওয়ার কথা বলে কম্বোডিয়ায় নিয়ে বিভিন্ন সাইবার ক্রাইমে কাজে লাগানো হয়। কম্বোডিয়ায় গিয়ে সাইবার দাসত্বের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। একেক জনকে এক থেকে পাঁচ হাজার ডলারে বিক্রি করা হচ্ছে চীনের নাগরিকদের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। কেউ প্রতিবাদ করলে কিংবা চলে আসতে চাইলে করা হয় নির্যাতন।

বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া- উভয় দেশেই রয়েছে এই মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা। মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরির কথা বলে বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়। কাজের কথা বলা হলেও তাদের কম্বোডিয়ায় নেওয়া হয় ভ্রমণ ভিসায়। দেশটিতে চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা চায়নিজ ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের বিক্রি করে দেয়। কখনও কখনও একেক জনকে কয়েক দফায় একাধিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করা হয়। কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে একেক জনকে এক থেকে পাঁচ হাজার ডলারে বিক্রি করা হয়। দেশটিতে পৌঁছানোর পরই অফিসিয়াল প্রয়োজনের কথা বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে রেখে দেয় পাসপোর্ট। বিক্রি করা ছাড়াও পাসপোর্ট জিম্মি করেও অনেকের কাছ থেকে আদায় করা হয় লাখ টাকা। কেউ প্রতিবাদ করলে চলে বর্বর নির্যাতন।

সূত্র জানায়, কম্বোডিয়ায় কমপক্ষে ২০ জন বাংলাদেশি মানবপাচার চক্রের নিয়ন্ত্রণ করে। শরিফুল ইসলাম (পাসপোর্ট BK0028107) তাদের একজন। নিহত জাকারিয়া রেজা কম্বোডিয়ায় শরিফুল ইসলামের হয়ে মানবপাচার চক্রে কাজ করতেন। সম্প্রতি শরিফুলের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জাকারিয়ার ওপর হামলা চালায় শরিফুল। তার মাথায় আঘাত করার ফলে মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। 

সূত্র আরও জানিয়েছে, অন্যদের মতো জাকারিয়াও বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজের উদ্দেশে কম্বোডিয়ায় গেছেন। তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয় সাইবার সেন্টারে। সেখান থেকে পালিয়ে এসে চাকরি খোঁজার চেষ্টা করেন। পরে শরিফুলের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। শরিফুল ইসলাম বাংলাদেশ থেকে যেসব মানুষ কম্বোডিয়ায় নিয়ে আসতো তাদের বিভিন্ন সাইবার সেন্টারে বিক্রির বিষয়টি দেখাশোনা করতেন জাকারিয়া। লেনদেনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়।