বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ

৮০০ বছর আগের মসজিদ?

বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে নীলফামারীর আঙ্গারপাড়া বড়বাড়ী জামে মসজিদ।

কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না মসজিদটি কে ও কবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনের পাশাপাশি রহস্য হয়েই দাঁড়িয়ে আছে আঙ্গারপাড়া বড়বাড়ী জামে মসজিদ।

মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৩৮ ফুট ও প্রস্থে ৯ ফুটনীলফামারী সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া বড়বাড়ী নামে পরিচিতি লাভ করে মসজিদটি। কিন্তু এর নির্মাণ সম্পর্কে কারও পরিষ্কার ধারণা নেই। জেলা থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে গেলে দেখা যাবে মসজিদটি।

তিন গন্বুজের প্রাচীন মসজিদটিতে আছে ৮টি মিনার। তিন ফুট দৈর্ঘ ও দুই ফুট প্রস্থের তিনটি দরজা আছে। মাঝের দরজার ওপরে পাথরে খোদাই করা আরবি লিপি আছে।

মাঝের দরজার ওপরে পাথরে খোদাই করা আরবি লিপিমসজিদের মুয়াজ্জিন মো. শফিকুল ইসলাম (৫৫) জানান, ওতেই সম্ভবত লেখা আছে মসজিদের ইতিহাস। তবে ফলকনামাটি পুরনো ও ক্ষয়ে যাওয়ায় কী লেখা আছে পড়া যায় না। তিনি জানান, ২১ বছর ধরে এই মসজিদের খেদমতে আছি। কিন্ত কারও মুখে শুনিনি এটা কে বা কত সালে তৈরি হয়েছে।

মসজিদের নিয়মিত মুসুল্লি আব্দুল মজিদ (৬৪) বলেন, ফলকটা পড়ে দেখেছি। তাতে আরবি ৬১৬ হিজরি লেখা আছে মনে হয়। একটি নাম কোনওরকম বোঝা যায়-মাহমুদুল্লাহ হাসান। মসজিদের সামনে রয়েছে দুটি কবর। অনেকেই বলে কবর দুটি কোনও এক দম্পতির।

মসজিদের সামনে রয়েছে দুটি কবরমসজিদের ভেতর কথায় কথায় মো. ইউনুস আলী (৭০) বলেন এক জনশ্রুতির কথা। ১৯৮১ সালের দিকে এলাকার আসাদুজ্জামান কবির নামের এক বৃদ্ধ তার পারিবারিক সমস্যার সমাধান পেতে ফরিদপুরের এক পীরের দরবারে গিয়েছিলেন। ওই পীর নাকি তাকে বলেছিলেন, আপনাকে এরপর থেকে এতোদূর আসতে হবে না। বাড়ির পাশে তিন গম্বুজওয়ালা যে মসজিদ আছে, ওটার সামনে পূর্বদিকে এক কামেল অলি শুয়ে আছেন। তার কবরের খেদমত করলেই হবে।

এরপর ওই পীরের কথামতো নিদৃষ্ট স্থানে খনন করে দুটি প্রাচীন কবর পান আসাদুজ্জামান। তখন সেখানে নিজস্ব অর্থায়নে একটি টিনের ঘরের নিচে কবর দুটি বাঁধিয়ে দেন তিনি। মসজিদের শিলালিপি থেকে ধারণা করা হয়, এর একটি কবর মাহমুদুল্ল্যা হাসানের।

BT-Newমসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৩৮ ফুট ও প্রস্থে ৯ ফুট। মসজিদটির ইটের পুরু ২ ইঞ্চি, লম্বায় ১০ ইঞ্চি। ইট ও কবর দুটির ইটের মাপ, রং ও নকশা এক হওয়ায় ধারণা করা হয় তারাই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

২০০১ সালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি পাকা কক্ষ নির্মাণ করে পুরনো মসজিদের সঙ্গে যুক্ত করে ছয়টি সারি বাড়ানো হয়। এখন সেখানে দেড় শ’ জনের মতো নামাজ আদায় করতে পারেন।

মসজিদটির বয়স যদি ৮০০ বছরই হয়ে থাকে তবে প্রাচীনতম মুসলিম সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন এটি।