খাগড়াছড়ির সবচেয়ে পুরনো মসজিদ

বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে খাগড়াছড়ির কেন্দ্রীয় শাহী জামে মসজিদ।

দেশে মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কেন্দ্রীয় শাহী জামে মসজিদ। ১৪৪ বছর আগের ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি মসজিদটিতে নামাজ পড়তে জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন মুসুল্লিরা। খাগড়াছড়িতে আসা পর্যটকরাও এ মসজিদ না দেখে যান না।

গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান জাফর উল্ল্যাহ বলেন, তিনি তার দাদার কাছে শুনেছেন, মসজিদটি প্রতিষ্ঠার সময় খাগড়াছড়ি ছোট একটি বাজার ছিল। তখন খাগড়াছড়ি ছিল রামগড় মহাকুমার নিয়ন্ত্রণাধীন একটি গ্রাম। যে গ্রামের বাজারে মুসলিম ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান ছিল। তাদের আদিনিবাস ছিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান এলাকা। তারা রাঙামাটি, মহালছড়ি হয়ে চেঙ্গীর নদী দিয়ে নৌকা নিয়ে খাগড়াছড়ি আসতেন এবং বাণিজ্য করতেন। ওই ব্যবসায়ীদের একজন ছিলেন আমছু মিয়া বলি, আরেকজন লাল মিয়া। দু’জনের নেতৃত্বে আরও অনেকের সহযোগিতায় খাগড়াছড়ি জেলার চেংগী নদীর পাড়ে কাঠ ও শন দিয়ে বানানো হয় মসজিদটি। পরে টিনশেড ঘর থেকে বিল্ডিং ও এখন তিনতলা হয়েছে মসজিদটি। এখন মসজিদটির আয়তন প্রায় দশ হাজার বর্গফুট। টিনশেড বিল্ডিং থাকা অবস্থায় মসজিদটি বেশ কয়েকবার সংস্কার হয়।

এখন মসজিদটির তত্ত্বাবধানে আছেন গুরা মিয়া সওদাগর, বাদশা মিয়া সওদাগর, মকবুল আহমেদ পন্ডিত, ওবায়দুল হক, আহমেদুর রহমান ও আরও অনেকে।

শুরুর দিকে ৩০-৪০ জন নিয়ে জামাত হতো। এখন খাগড়াছবি জামে মসজিদটিতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন প্রায় পাঁচ হাজার মুসুল্লি।

মসজিদটির কারুকাজ দেখে কারও ধারণা এটি ইরানের মসজিদগুলোর আদলে বানানো। এর বাইরের দিকের আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৯৫ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১০০ ফুট। নামাজ কক্ষটি বর্গাকার। মিনারে রয়েছে সুদৃশ্য কারুকাজ।

মোট তিনটি গম্বুজ আছে। ভেতরে আছে বেশ কয়েকটি ঝাড়বাতি ও দেয়ালে মনোমুগ্ধকর নকশা।

এ মসজিদে ইটের সঙ্গে পাথরের ব্যবহারও করা হয়েছে। দেয়ালের মাঝে পাথরের স্তম্ভ, ইটের গাঁথুনি চোখে পড়ার মতো। পূর্ব-দক্ষিণে আছে ওজুখানা ও শৌচাগার।

এখানে নামাজ পড়তে আসা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খাগড়াছড়ি কেন্দ্রীয় শাহী জামে মসজিদ একটি দর্শনীয় স্থান। সুউচ্চ এ মিনার দূর থেকে দেখলেই চেনা পথিক বুঝতে পারবেন যে তিনি খাগড়াছড়ি শহরে চলে এসেছেন। মসজিদটি মুসলিমদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। জায়গাটিও নয়নাভিরাম। এখানে এলেই মন ভালো হয়ে যায়।’

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহেদুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক বছর ধরে মসজিদটির দায়িত্বে আছি। আগে আমার পূর্বপুরুষরা এর দায়িত্বে ছিলেন। এই মসজিদের পেছনে অনেক ইতিহাস। আগামী প্রজন্মের জন্য মসজিদটি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। তবে এর কিছু সংস্কার এখনও বাকি। ২০২০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করে শীতাতপ যন্ত্র বসিয়েছে। এতে মুসুল্লিদের বেশ সুবিধা হয়েছে। একই সংস্থা মসজিদের জন্য আধুনিক ওজুখানা ও দেয়াল নির্মাণে আরও ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২২ সাল নাগাদ এ কাজ সমাপ্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

মসজিদের খতিব আবদুন নবী হক্কানী ও পেশ ইমাম মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা এখানে নামাজ আদায় করার পাশাপাশি ছবিও তুলে রাখেন। মসজিদটি জেলার সবচেয়ে পুরনো বলে ধারণা অনেকের।

মসজিদের আয়

এ মসজিদের নামীয় সম্পত্তিতে ২৮টি দোকান-প্লট আছে। যা হতে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আয় হয়। এ ছাড়া জুমার দিনের দান হতে বছরে আয় হয় ৬/৭ লাখ টাকা। দুই একর কৃষি জমি হতে আয় হয় ৩৫-৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া খাগড়াছড়ি বাজারে মসজিদের একটি পুকুর আছে। যেখানে মাছ চাষ হয়। পাশাপাশি সরকারি ও ব্যক্তিগত অনুদানও আছে।