চাকচিক্যের ঘাটতি নেই ৩০০ বছর আগের বজরা শাহী মসজিদে

বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে নোয়াখালীর বজরা শাহী মসজিদ।

১৮ শতকে নির্মিত মুঘল আমলের স্থাপত্য নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী বজরা শাহী মসজিদ। নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নে গেলে দেখা যাবে আনিন্দ্য সুন্দর মসজিদটি। নোয়াখালীর ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর একটি এটি। দিল্লির শাহী মসজিদের আদলে নির্মিত মসজিদটি ১৭৪১ সালে মুঘল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের আমলে জমিদার আমান উল্লাহর তদারকিতে নির্মাণ করা হয়।

মনোমুদ্ধকর সুনিপুণ নকশায় ভরপুর বজরা শাহী মসজিদপ্রায় ৩০০ বছর আগে বানানো বজরা শাহী মসজিদটি নোয়াখালীতে আসা পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ।

মসজিদটির চারপাশ প্রাচীর দিয়ে বেষ্টিত। প্রবেশপথ পূর্ব দিকে। মসজিদের কাছেই দিঘী। সেটার পশ্চিম পারে উঁচু ভিতের ওপর বানানো হয়েছে এটি। অনন্য স্থাপত্যশৈলীর কারণে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখানে নামাজ পড়তে আসেন। ঘুরতেও আসেন অনেকে।

মনোমুদ্ধকর সুনিপুণ নকশায় ভরপুর বজরা শাহী মসজিদটি আয়তাকার (১৬ মিটার বাই ৭.৩২ মি.)। উত্তর দক্ষিণে লম্বা। বাইরের চার কোনায় অষ্টভূজাকৃতির বুরুজ রয়েছে। পূর্বে তিনটি, উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি দরজা। দরজার বাইরের দিকে ও দুই পাশে সরু মিনার।

.পূর্বদিকের তিনটি দরজা বরাবর কিবলা দেয়াল। যার ভেতর তিনটি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি অন্য দু’টির চেয়ে বড়। মসজিদের ভেতর দুটি কক্ষ। যা বহুখাঁজবিশিষ্ট আড়াআড়ি খিলান দিয়ে তিনভাগে বিভক্ত।

ছাদের ওপর তিনটি কন্দাকৃতির গম্বুজ আছে। এগুলোর শীর্ষভাগ পদ্ম ও কলস চূড়ার নকশা দ্বারা সজ্জিত।

১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের মাঝামাঝিতে বজরার জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ ও খান বাহাদুর মুজির উদ্দিন আহমদ মসজিদটি ব্যাপকভাবে মেরামত করেন। রঙবেরঙের সিরামিকের মোজাইক দিয়ে সজ্জিত করেন তারা।

জমিদার আমান উল্যাহ তার বাড়ির সম্মুখে ৩০ একর জমির ওপর উঁচু পাড় যুক্ত দীঘিটি খনন করেন। এ মসজিদটিকে মজবুত করতে মাটির প্রায় ২০ ফুট নিচ থেকে ভিত্তি তৈরি করা হয়।

.গম্বুজগুলোর সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে। প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি ধনুকাকৃতি দরজা। প্রবেশপথের ওপর রয়েছে কয়েকটি গম্বুজ।

কথিত আছে, মুঘল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের বিশেষ অনুরোধে পবিত্র মক্কা শরিফের বাসিন্দা, (কারো মতে দিল্লির বাসিন্দা) বুজুর্গ হযরত মাওলানা শাহ আবু সিদ্দিকী এ মসজিদের প্রথম ইমাম নিয়োজিত হন। তার বংশধররা যোগ্যতা অনুসারে আজও এ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে প্রথম ইমামের বংশধর ইমাম হাসান সিদ্দিকী ইমামতি করছেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বজরা শাহী মসজিদে মানুষ এসে নামাজ আদায় করেন। গত এক যুগ ধরে নারীরাও নামাজ পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন এ মসজিদে। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৯৮ সালে ২৯ নভেম্বর সরকারি গেজেটে মসজিদটিকে প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনও মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে করে মুঘল আমলে স্থাপনাটি দিন দিন জলুস হারাচ্ছে।

এলাকাবাসী জানায়- মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নতুন করে সিরামিক স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো মসজিদকে আনা হয়েছে সিসি ক্যামেরার আওতায়।