বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে ঢাকার চকবাজার শাহী মসজিদ।
সবাই ডাকে চক মসজিদ নামে। আশপাশের আধুনিক সভ্যতার দাপটে বোঝার উপায় নেই যে, মাঝের মসজিদটি চার শ’ বছরের পুরনো।
সংস্কারের কারণে অবকাঠামোয় পরিবর্তন এসেছে কয়েকদফা। তবে মূল কাঠামো গড়ে ওঠে ১৬৭৬ সালে সুবাদার শায়েস্তা খানের আমলে। চকবাজারের পশ্চিম প্রান্তে মসজিদটি নির্মাণ করেন তিনি। মূলত চকবাজার শাহী মসজিদকে কেন্দ্র করেই চকবাজারের উদ্বোধন হয়েছিল। পরে এ মসজিদকে ঘিরেই বাজারের সম্প্রসারণ হয়।
এত এত সংস্কারের চাপে চক মসজিদটি ঠিক আগের চেহারায় নেই আর। মসজিদটির দেয়াল ছিল মুঘল রীতি অনুযায়ী পুরু। প্রবেশ দরজার খিলানগুলো ছিল চওড়া ও প্রশস্ত।
চকবাজার শাহী মসজিদটির মূল অবকাঠামো ছিল মাটি থেকে প্রায় দশ ফুট উঁচুতে। আদিতে এর দৈর্ঘ্য ছিল ৫০ ফুট, প্রস্থ ২৬ ফুট। মসজিদের দুই পাশে দুটি আর মাঝে চারটি খিলান। চারকোণে বুরুজের ওপর ছোট ছোট মিনারও ছিল।
উত্তর-পূর্ব কোণে ছিল সুউচ্চ মিনার। এখন অবশ্য এর উচ্চতা আরও বাড়ানো হয়েছে। মিনারের নিচে ছিল মসজিদের প্রধান প্রবেশদ্বার। দক্ষিণ দিক দিয়েও প্রবেশ করা যেত। মুঘল আমলে চক মসজিদই ছিল ঢাকার কেন্দ্রীয় মসজিদ। তখন মাইক ছিল না বলে আজান দেওয়া হতো মিনার থেকে। কাছাকাছি অন্যান্য মসজিদের মুয়াজ্জিনরা এই চক মসজিদের আজান শুনেই আজান দিতেন।
আরেকটি সামাজিক রীতি ছিল এ চক মসজিদ ঘিরে। জুমার নামাজের দিন চারপাশের বাড়ি থেকে মিষ্টান্ন পাঠানো হতো এখানে। নামাজ শেষে যা বিতরণ করা হতো মুসুল্লিদের মাঝে।
বতর্মানে চকবাজার শাহী মসজিদের আয়তন আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। আগের সেসব রীতিও আর নেই। এখন মূল প্রবেশপথের সামনে একটি অর্ধগম্বুজ ভল্ট আছে। তাতে দেখা যায় চমৎকার নকশা।