বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে রাঙ্গামাটির কর্ণফুলী পেপার মিল মসজিদ।
এখনকার সময় স্তম্ভবিহীন কোনও দালানের কথা ভাবা যায়? অসম্ভব কাজটি দৃষ্টিনন্দন ও সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে রাঙামাটির জেলার কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পেপার মিলের মসজিদ নির্মাণে।
১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের দাউদ গ্রুপ কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) দায়িত্ব নেওয়ার পর মসজিদটি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৬৭ সালের ৮ ডিসেম্বর কেপিএমের আবাসিক এলাকায় মসজিদটির ভিত্তি স্থাপন করেন দাউদ গ্রুব অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আহমেদ দাউদ এইচ কে।
সচরাচর দালান নির্মাণে সমান ছাদ ব্যবহার করা হলেও এটি নির্মাণে বিম থেকে আড়াআড়িভাবে ঢেউটিন আকৃতিতে ছাদ তৈরি করা হয়েছে। ধারণা করা হয় এই কারণে ছাদের চাপ কমে যাওয়ায় স্তম্ভের প্রয়োজন পড়েনি।
অনেক বড় বড় মসজিদে স্তম্ভের কারণে ইমামকে সরাসরি দেখা যায় না। তবে এই মসজিদে মুসুল্লিরা যেখানেই দাঁড়ান না কেন প্রত্যেকেই খতিব কিংবা ইমামকে দেখতে পান। এতে প্রাকৃতিক বাতাস প্রবেশের পথও আছে। তাই ভেতরটা বেশ শীতল থাকে।
মসজিদটি যুগযুগ ধরে অনেক ঐতিহ্য, ইতিহাসের সাক্ষী বহন করছে বলে জানান স্থানীয়রা। মসজিদ নির্মাণের প্রতক্ষদর্শী বশির খাঁন জানান, মসজিদ নির্মাণে নির্মাণসমাগ্রী আনা হয়েছিল করাচি থেকে। পুরো এক বছর লেগেছে নির্মাণ শেষ করতে। এটি নির্মাণে কাজ করেছেন ভারতের প্রকৌশলীরা।
আরেক মুসুল্লি মো. হারুন মিয়া বলেন, আমি জুমার নামাজ আদায়ের জন্য প্রতি শুক্রবার এখানে আসি। এ মসজিদের যে কোনও প্রান্তে বসে আপনি ইমামের কথা শুনতে ও তাকে দেখতে পাবেন।
স্বাধীনতার পর মসজিদটির পরিচালনার দায়িত্ব পায় কেপিএম কর্তৃপক্ষ। কালের বির্বতনে মসজিদটি হারিয়েছে জৌলুস। এখন ঋণের ভারে জর্জরিত কেপিএম। যার প্রভাব পড়েছে মসজিদেও। মিল কর্তৃপক্ষ মসজিদের জন্য সরাসরি কোনও সহযোগিতা করতে না পারলেও একটি পরিচালনা কমিটি করে দিয়েছে। আপাতত স্থানীয়দের দানেই চলছে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির কার্যক্রম।
ইতোমধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে মসজিদের দেয়ালে। বৃষ্টির পানির ঢোকে। কোথাও ঝরে পড়েছে সিলিং। মসজিদটির দ্রুত সংস্কারের দাবি জানালেন এর মুয়াজ্জিন ও পেশ ইমাম।
কেপিএম জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. মহিউদ্দীন বলেন, আগে ৬ থেকে ৭ জন কাজ করলেও এখন শুধু আমরা দু’জন রয়েছি।
মসজিদটির মৌলিকতা ধরে রেখে সংস্কার ও মসজিদটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে মসজিদ কমিটি। কেপিএম জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বলেন, এটি পিলার বিহীন ঐহিত্যবাহী একটি মসজিদ। মসজিদটির সংস্কারে উদ্যোগ নিলেও স্থানীয় প্রকৌশলীদের দিয়ে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সরকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করবো যেন এটিকেও ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিভাবে মসজিদটির স্বাতন্ত্র অক্ষুণ্ন রাখা যায় তা নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা নেবো।