বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ

এক মসজিদের তিন নাম

বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে ঢাকার বেগম বাজার মসজিদ।

পুরান ঢাকার বেগম বাজারে আছে মুঘল সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী কর্তালাব খান মসজিদ। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে 'বেগম বাজার মসজিদ' নামেই পরিচিত। মুঘল স্থাপত্যের নির্দশনগুলোর মধ্যে কর্তালাব খান মসজিদ অন্যতম। শতাব্দীর পর শতাব্দী এখনও স্ব-মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদ। শৈল্পিক বিচারেও অনন্য।

বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ ঢাকায় অবস্থানকালে ১৭০০-১৭০৪ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির নাম তার নামে প্রথমে মুর্শিদকুলি খাঁ মসজিদ রাখা হয়। সম্রাট আওরঙ্গজেব মুর্শিদকুলি খাঁকে ১৭০০ সালে সম্মানসূচক কর্তালাব খান উপাধি দিয়ে দেওয়ান হিসেবে বাংলায় পাঠান। এরপর মসজিদের নাম হয়ে যায় কর্তালাব খান মসজিদ।

১৭৩৯-৪০ সালে ঢাকার নায়েবে নাজিম সরফরাজ খাঁর কন্যা লাভলি বেগমের নামানুসারে মসজিদটির নাম আবার বদলে হয় বেগম বাজার মসজিদ।

প্রায় সাড়ে তিন শ’ বছরের পুরনো স্থাপত্যশৈলীর মসজিদ এটি। রয়েছে আকর্ষণীয় পাঁচটি গম্বুজ। অষ্টভূজাকৃতির গম্বুজগুলো পদ্ম ও কলসচূড়ায় শোভিত।

বেগম-বাজার-মসজিদ

গম্বুজের ভার বহনে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে তা ঢাকার লালবাগ মসজিদ ও সাতগম্বুজ মসজিদের অনুরূপ।

পুরো মসজিদ একটি উঁচু প্লাটফর্মের ওপর বানানো। প্রধান গম্বুজটি কেন্দ্রীয় মিহরাবের ওপর। প্লাটফর্মটির নিচে সারিবদ্ধভাবে অনেকগুলো কক্ষ আছে। এগুলো এখন দোকান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মসজিদের উত্তরে আয়তাকার সম্প্রসারিত অংশটি দোচালা কুড়েঘরের মতো ছাদ দিয়ে আচ্ছাদিত। মসজিদ ভবনটির অলঙ্করণে রয়েছে ইসলামিক মোটিফের ব্যবহার। ভেতরটা আড়াআড়ি চারটি খিলানের মাধ্যমে বিভক্ত।

কর্তালাব খান মসজিদের পূর্ব দিকে রয়েছে পাঁচটি প্রবেশপথ। প্রতিটি প্রবেশপথ বরাবর মসজিদের ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে একটি করে মিহরাব আছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি ইমামের দাঁড়ানোর স্থান। বাকি চারটি মিহরাব নান্দনিকতার জন্য নির্মিত।বেগম-বাজার-মসজিদ

প্রবেশপথের ওপর অর্ধ-গম্বুজ আকৃতির খিলান ছাদ আছে। পাশে অষ্টভূজাকৃতির ছোট মিনার রয়েছে। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালেও একটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে চমৎকার অলঙ্ককরণ দেখা যায়।

পুরান ঢাকার বেগম বাজার মসজিদটি দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভিড় করেন। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবেও এখানে মুসুল্লিদের ভিড় হয়।