৬৫০ বছর ধরে বন্ধ, গায়েবি ইশারায় ফের চালু হাদিস চর্চা কেন্দ্র!

যেভাবে শুরু

ইসলামি ইতিহাসে বাংলাদেশের গৌরবময় অধ্যায় আছে। এখানেই গড়ে উঠেছিল উপমহাদেশের সর্বপ্রথম হাদিস চর্চা কেন্দ্র। শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা আল-বুখারি আদ-দেহলভি আল-হানাফি (রহ.) নামের এক আরবি বুজুর্গ আলেম ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় শিক্ষাকেন্দ্রটি গড়ে তোলেন। ১২৭০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৬৬৮ হিজরি সন। এসময় এ মনীষী ইসলাম শিক্ষার প্রসারে দিল্লি আসেন। তারপর সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহর অনুরোধে আসেন বাংলায় এবং প্রতিষ্ঠা করেন হাদিসচর্চার ঐতিহাসিক মাদ্রাসাটি।

 

মাদ্রাসার কার্যক্রম

মাদ্রাসার পাশাপাশি সোনারগাঁয়ে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগারও প্রতিষ্ঠা করা হয়। সারাবিশ্বের দুর্লভ গ্রন্থ ও ইসলামি বইপত্রের বিশাল সমাহার ছিল এখানে। মাদ্রাসা ও পাঠাগারকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশের দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানার্জনের জন্য ছুটে আসতো এখানে। এক সময় অন্তত দশ হাজার শিক্ষার্থী এখানে হাদিসের পাঠ নিতো। শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা দীর্ঘ ২৩ বছর এ মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করেছেন।

শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা রহ. এর মাজার

যখন বন্ধ হলো

শায়খ আবু তাওয়ামা (রহ.) ১৩০০ খ্রিস্টাব্দে সোনারগাঁয় ইন্তেকাল করেন। মাদ্রাসার পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর সমাধিটি আজও সংরক্ষিত। শায়খের ইন্তেকালের পরে ক্ষমতার পালাবদল, রাজধানী স্থানান্তর এবং যোগ্য উত্তরসূরির অভাবসহ নানা কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের প্রথম হাদিসচর্চা কেন্দ্রটির প্রদীপ নিভে যায়।

 

গায়েবি ইশারায় ফের চালু

দীর্ঘ ৬৫০ বছর বন্ধ থাকে এটি। অবশেষে সোনারগাঁয়ে ফের হাদিসের আলো প্রজ্জ্বলিত হয়। পাশেই অবস্থিত জামিয়া আরাবিয়া ইসলামিয়ায় ২০০৬ সালে হাদিসের পাঠদান শুরু করেন স্থানীয় বর্ষীয়ান আলেম মাওলানা হাতেম আলী। তিনি নিজেও এখন প্রায় শতবর্ষী।

মাওলানা হাতেম আলীর পুত্র মাওলানা নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সোনারগাঁয়ে পুনরায় হাদিসের পাঠদান শুরু করতে আমার পিতা একাধিকবার স্বপ্নে ইঙ্গিত পান। পাঠ শুরু হলে তিনি আরও বিস্ময়কর এক স্বপ্ন দেখেন-‘মাদরাসার মাঠে সব শিক্ষক উপস্থিত এবং অসংখ্য সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-ও এসেছেন। মাঠের এক পাশে এক ব্যক্তিকে দেখে তিনি বললেন, এই ব্যক্তি কি উসমান গনি (রা.)? তাঁকে বলা হলো—হ্যাঁ, তিনি উসমান গনি (রা.)।’ মাওলানা নজরুল ইসলাম জানান, তার পিতা বিশ্বাস করেন, এই স্বপ্নের পর মাদরাসার সার্বিক অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে।

 

লেখক: শিক্ষক-মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ ঢাকা।