গাছে পেরেক মেরে দোয়া প্রচারে কি সওয়াব হবে?

ইদানিং বিভিন্ন এলাকায় সড়কের দুপাশে গাছের মধ্যে নানা ধরনের দোয়া ও জিকির সম্বলিত ব্যানার ও প্লেকার্ড দেখা যায়। পথচারীদের আল্লাহর কথা স্বরণ ও দোয়া পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে এ উদ্যোগ। কেননা, নিজে দোয়া পাঠ ও জিকির করা যেমন পুণ্যের কাজ ঠিক একইভাবে অন্যকে ভাল কাজ স্মরণ করিয়ে দেওয়াটাও প্রশংসনীয়।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি স্মরণ করিয়ে দিন, কেননা, স্বরণ করিয়ে দেওয়া মুমিনদের উপকৃত করে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ৫৫)।

তবে লক্ষণীয় যে গাছে ঝুলন্ত জিকির ও দোয়া সম্বলিত এসব প্লেট সাধারণত টিন বা এ জাতীয় বস্তু দিয়ে তৈরি। যেগুলো পেরেক ঠুকে গাছের শরীরে ক্ষত সৃষ্টি করে সাঁটানো হয়। উদ্দেশ্য ভালো হলেও গাছের ক্ষতি করে এ কাজ কতটা যৌক্তিক ও শরিয়তসম্মত এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল দেশের সুপরিচিত ইসলামি স্কলার ও ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমাদুল্লাহর কাছে।

তিনি এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা যদি একে অন্যকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই জিকিরের কথা, আল্লাহর কথা, ভালো কাজের কথা, তবে সেটা ভালো। আল্লাহ তায়ালা অন্যকে ভালোকাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পবিত্র কোরআনে উদ্বুদ্ধও করেছেন।’

কিন্তু গাছে পেরেক লাগিয়ে দোয়া ও জিকির সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগানো থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘গাছে পেরেক লাগানোর ফলে গাছের ক্ষতি হচ্ছে। একটি জীবের ক্ষতি করে দোয়া প্রচার ও ভালো কাজ করার সুযোগ ইসলামে নেই।’

তা ছাড়া শুধু গাছের ক্ষতি হবে-এ আশঙ্কা থাকলেও এ এরূপ কাজ করা যাবে না। বাইহাকি শরিফের রাসুল (সা.)-এর একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে সময়ের জনপ্রিয় এ ইসলামি ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘অপ্রয়োজনে বরই গাছ (সে সময়ে আরবে বরই গাছ বেশি ছিল। তবে এখানে সব গাছকেই বোঝানো হচ্ছে।) যে কাটে তার মাথাটাকে আগে জাহান্নামে দেওয়া হবে।’

পরিবেশের ভারসাম্যর দিকে খেয়াল করে বিনা প্রয়োজনে যেকোনও ধরনের গাছকাটা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

ইসলামে অবশ্য গাছ কাটা নিয়ে আরও কিছু বিধান রয়েছে। যেমন নিজের আঙিনায় লাগানো বড় বৃক্ষ কাটার অনুমতি আছে। কিন্তু অপ্রয়োজনে মানুষকে ছায়া ও ফল দেয়- প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এমন গাছ কাটার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে।

তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমরা এমনটি করি, তবে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। অতএব গাছের মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা পেরেকের বদলে সুতা দিয়ে কাজটা করলে তা প্রশংসনীয় হবে।’