নতুন সাজে খুলতে যাচ্ছে উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ

ভারতের কেরালার মেথালায় অবস্থিত উপমহাদেশের সর্বপ্রথম মসজিদটি শিগগিরই আবার মুসল্লিদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। চেরামান জুমা মসজিদ নামের বিখ্যাত স্থাপনাটির গত আড়াই বছর ধরে সংস্কার চলছে। মুরিজিস হেরিটেজ প্রকল্পের অধীনে একদল শ্রমিক কাজ করেছে রাত-দিন। ইতোমধ্যে সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের বেশক’টি গণমাধ্যম।

পত্রিকাটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এখন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সবুজ সংকেত পেলে যেকোনও সময় মুসল্লিদের জন্য ফের উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় নির্মিত এ মসজিদ। আগামী দেড় সপ্তাহের মধ্যেই এটি উন্মুক্ত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

টিভি নাইন ডটকম নামের ভারতের এক গণমাধ্যম জানিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী চেরামান জুমা মসজিদের মৌলিক রূপ ঠিক রেখে এর ধ্রুপদী সৌন্দর্য ও অনন্য নির্মাণশৈলীকে পুনরুদ্ধার করতে খরচ করা হয়েছে সোয়া কোটি রুপি। এখন শেষ সময়ের অভ্যন্তরীণ ঘষামাজার কাজ চলছে।

গণমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, চেরামান মসজিদ চত্বরে দ্বিতল ভবনের একটি ‘ইসলামি হেরিটেজ মিউজিয়াম’ও নির্মাণ করা হয়েছে। এর পেছনে ব্যয় হয়েছে আরও এক কোটি রুপি।

গত শতাব্দীতেও একাধিকবার মসজিদটির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয়। ক্রমান্বয়ে মুসল্লি বৃদ্ধির ফলে ১৯৭৪, ১৯৯৪ ও ২০০১ সালে মসজিদের সামনের অংশ ভেঙে আয়তন সম্প্রসারিত করা হয়। প্রাচীন মসজিদের অভ্যন্তরীণ অংশ, মিহরাব ও মিনার এখনও আগের মতো অক্ষত রয়েছে।

চেরামান জুমা মসজিদের প্রধান ফটক

চেরামান জুমা মসজিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

আরব সাগরের তীরবর্তী এলাকা কেরালার রাজা ছিলেন চেরামান পেরুমল। ১৭ রজব ৬১৭ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.)-এর আঙুলের ইশারায় যখন চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়, তখন তিনি তা ভারতের আকাশে দেখতে পান। রাজ্যের ধর্মীয় পুরোহিতদের কাছে এ অদ্ভুত রহস্যের কোনও সদুত্তর পাননি তিনি। এদিকে প্রাচীনকাল থেকেই কেরালার সঙ্গে আরবদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। চাঁদ দিখণ্ডিত হওয়ার পর আরব সাগর হয়ে সাহাবায়ে কেরামের একটি দল কেরালায় আসেন। তখন তাদের থেকে রাজা চাঁদ দিখণ্ডিত হওয়ার আসল ঘটনা জানতে পারেন। এতে তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং সাহবাদের সঙ্গে মক্কায় যান। সেখানে রাসুল (সা.)-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করে তাজউদ্দিন নাম ধারণ করেন। মুসলমান হওয়ার পর ১৪ জনের একটি কাফেলা নিয়ে কেরালার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সে কাফেলায় মালিক দিনার (রা.) নামে এক সাহাবি ছিলেন। পথে রাজা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত্যু নিকটে বুঝে মালিক দিনার মারফত তার আত্মীয়দের নিকট একটি চিঠি পাঠান। তাতে লেখেন, কাফেলাটির যেন সম্মান করা হয়।

চেরামান জুমা মসজিদ

কাফেলাটি কেরালায় পৌঁছালে শাসকবর্গ তাদের বেশ সমাদর করে এবং ইসলাম প্রচারের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেয়। সেদিন যে মসজিদটি তারা নির্মাণ করেন সেটিই উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ। রাজার নাম ধারণ করে যেটি আজও ‘চেরামান জুমা মসজিদ’ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

রাজা চেরামান পেরুমল একজন সাহাবি ছিলেন। একটি হাদিসে সেটার উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থ মুসতাদরাকে হাকিম-এ হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘রাসুল (সা.)-এর কাছে ভারতবর্ষের এক রাজা আদাভর্তি একটি কলসি উপহার পাঠান। রাসুল (সা.) প্রত্যেককে এক টুকরা করে খেতে দেন। আমাকেও এক টুকরা দিয়েছিলেন।’ মুহাদ্দিসরা এখানে রাজা বলতে কেরালার রাজা চেরামান পেরুমলকেই বুঝিয়েছেন।