আকাশপথে সেহরি বা ইফতার কোন সময় ধরে?

আকাশপথে দূরের যাত্রায় ফ্লাইটে বসেই খাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকের জন্যই হয়তো নতুন কিছু না। কিন্তু রোজা রেখে ইফতার বা সেহরি করতে হয় নির্দিষ্ট সময়ে। দূরের যাত্রায় সেহরির সময় হয়তো হচ্ছে এক দেশ বা শহরে, আবার ইফতার করতে হচ্ছে অন্য কোনও দেশ বা শহরে। সমস্যা হলো, এসব দেশ কিংবা শহরের সময়ের ব্যবধান থাকে, সেক্ষেত্রে যাত্রী সেহরি বা ইফতার করবেন কোন সময় ধরে?

সোমবার (২৭ মার্চ) প্রথমবার এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন মালিন্দো এয়ারের বেশ কয়েকজন যাত্রী। এই ফ্লাইটের যাত্রী শফিউল্লাহ সুমন বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা। ভূমি থেকে ৩০ হাজার ফুট ওপরে সেহরি। প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না, সেহরি কোন সময় অনুযায়ী হবে। ফ্লাইটে খাওয়ার খাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও রমজানে আকাশে বিমানে বসে সেহরি এটাই প্রথম।’

রবিবার (২৭ মার্চ) দিবাগত রাতে ১টা ১০ মিনিটের দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে ‘ওডি ১৬১’ ফ্লাইটটি। আর তখন মালয়েশিয়ায় রাত ৩টা ১০ মিনিট। ঢাকা থেকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড হয়ে ফ্লাইটটি কুয়ালালামপুরে পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় ৩ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট।

ওই রাতে বাংলাদেশে সেহরির সময় ছিল ভোর ৪টা ৩৬ মিনিটে। যদিও মালয়েশিয়ায় সেহেরির শেষ সময় ভোর ৬টা ৫ মিনিটে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার সময় বাংলাদেশের তুলনায় ২ ঘণ্টা সময় এগিয়ে। অর্থাৎ বাংলাদেশ যখন ভোর ৪টা ৩৬ মিনিট, তখন মালয়শিয়ায় ভোর ৬টা ৩৬ মিনিট।

শফিউল্লাহ সুমন বলেন, ‘আমরা যখন সময়ের এই হিসাব-নিকাশ নিয়ে ব্যস্ত, এমন সময় পাইলট সেহেরি খাওয়ার সময় ঘোষণা করেন। ঘড়িতে বাংলাদেশ সময়ে রাত ২টা বাজে। গুগল করে জানা গেলো, মালয়েশিয়ার সময় তখন ভোর ৪টা।’

পাইলটের ঘোষণায় সেহেরি খাওয়ার সমাধান হলেও সময় নিয়ে প্রশ্নটা রয়েই গেলো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ’র শিক্ষক বেলায়েত হুসাইন জানান, রোজা শুরু হয় সুবহে সাদিক থেকে। সুবহে সাদিক হলো সূর্য উদয়ের আগ মুহূর্ত। সুবহে সাদিক থেকে সাহরির সময় শেষ হয়ে যায় এবং এরপর থেকেই ফজরের সময় শুরু হয়। কেউ যদি বিমানে রোজা রাখতে চান কিংবা নামাজ আদায় করতে চান, তাহলে বিমানে তিনি যেখানে অবস্থান করছেন, সেখান থেকেই সুবহে সাদিক হিসাব করতে হবে। সূর্যাস্তের বিষয়টিও একইরকম। তবে চলতি বিমানে সাধারণ সময়ের মতো সঠিক সময় টের পাওয়া যায় না। তারপরও সেখানে নিজ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সূর্যের উদয় ও অস্তের ব্যাপারটি ধরে নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- যেমন ধরুন- মালয়েশিয়ার সময় বাংলাদেশ থেকে দুই ঘণ্টা এগিয়ে। বাংলাদেশে যখন ভোর ৪টা, মালয়েশিয়ায় তখন ৬টা। এখন কেউ ঢাকা থেকে বিমানে রাত ২টা বা ৩টায় কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে রওনা হলো- এ অবস্থায় তিনি সেহরি করবেন কখন?

এ ব্যাপারে ফতোয়া হলো- বিমান যে দেশের ওপর দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে, যাত্রীরা ওই দেশের সেহরি-ইফতারের সময় হিসাব করবেন না। কারণ, আকাশে ও জমিনে সময়ের পার্থক্য থাকে। এক্ষেত্রে বিমানের সময়টিই বিবেচিত হবে। মানে সেখানে নিজ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সূর্যের উদয় ও অস্তের ব্যাপারে যা জানা যাবে, সেই হিসাবে সেহরি-ইফতার বা নামাজ আদায় করতে হবে। তবে ফোকাহায়ে কেরাম বলেন, এই পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক কিছুক্ষণ আগেই সেহরি সেরে নেওয়া ও ইফতার করা একটু পরে।

কিন্তু লক্ষণীয় হলো, বিমানে রোজার বিষয়টি নিয়ে তারাই বেশি চিন্তা করেন, যারা অনেক দূরে সফর করেন। সেক্ষেত্রে যারা নিজ অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা প্রায় ৭৭ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দূরে কোথাও সফরে বের হন, শরিয়তের দৃষ্টিতে তিনি একজন মুসাফির। এক্ষেত্রে তার রোজা না রাখারও স্বাধীনতা আছে (পরে রাখার শর্তে)। আবার কেউ যদি বিমানে রোজা রাখতে চান কিন্তু সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত বুঝতে না পারেন, তাহলে তিনিও রোজা না রাখার স্বাধীনতা রাখেন। (পরে রাখার শর্তে)। এতে তার কোনও গোনাহ হবে না।