তাকওয়া অর্জনের মাস রমজান

আরবি ভাষার ছোট্ট একটি শব্দ তাকওয়া। অর্থ আল্লাহভীতি, নিজেকে রক্ষা করা, বেঁচে থাকা ইত্যাদি। পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয়, আল্লাহর ভয়ে সব পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে তার সব বিধিবিধান মেনে চলা। আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করা যে তিনি আমাকে দিনের আলোতে যেমন দেখছেন, রাতের আঁধারেও ঠিক তেমনি দেখছেন। আমার অন্তরের সুধারণা বা কুমন্ত্রণা সব বিষয়েই তিনি সম্যক অবগত আছেন। আমার যাবতীয় কাজ-কর্মের হিসাব তার সামনে দাঁড়িয়ে দিতে হবে– এমন ভীতি এবং বিশ্বাসের নামই হলো তাকওয়া। বস্তুত তাকওয়ার চর্চার মাধ্যমেই মানুষ পশুত্বের কাতার থেকে মনুষ্যত্বের আসনে সমাসীন হয়।

মাহে রমজান মানবজাতির জন্য এক মহা নিয়ামত। এ মাস তাকওয়া অর্জনের মাস। আত্মশুদ্ধির মাস। গোনাহ মাফের মাস।

রমজানের সিয়াম সাধনা মূলত তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। এ মর্মে আল-কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পাবো ( সুরা,বাকারা:১৮৩)। এ আয়াতের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে সারাদিন পানাহার, স্ত্রী-সম্ভোগ, ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকাই হচ্ছে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। তাহলে এত কষ্ট করে যেই তাকওয়া অর্জন করতে হয় আসলে কী সেই তাকওয়া? তাকওয়া অর্জিত হলে লাভ কী?

তাহলে বলা যায়, তাকওয়া হলো-মারামারি, হানাহানি, চুরি-ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, হত্যা, কালোবাজারি, দায়িত্বে অবহেলা, কর্মে ফাঁকিসহ মানবজীবনের যাবতীয় অন্যায় থেকে বাঁচিয়ে রাখার এক অব্যর্থ প্রশিক্ষণের নাম।

চলমান বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখবো অন্যায় থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখার জন্য অসংখ্য বাহিনী, নানান কর্মসূচি, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, পথে-ঘাটে গোপনে-সদরে, মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরাসহ আরও কত কি। কিন্তু দিন শেষে ফলাফল শূন্য। কাজ হচ্ছে না এতো আয়োজনের পরেও। আর এমন হাজারও কর্মসূচির মাধ্যমেও মানুষকে অন্যায় থেকে ফেরানো সম্ভব না।

প্রশ্ন হতে পারে কী সেই জাদুমন্ত্র যার মাধ্যমে মানুষকে সব পাপ থেকে ফিরিয়ে রাখা সম্ভব?

হ্যাঁ সেই মহা মন্ত্রই হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অবলম্বন। যা অর্জিত হয় মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে।

তাকওয়া অর্জিত হলে লাভ কী? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি জনপদের লোকেরা ঈমান গ্রহণ করে আর তাকওয়া অবলম্বন করে, তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের সমস্ত বরকত সমূহের দরজা খুলে দেবো।’ ( সুরা: আল আরাফ: ৯৬)।

তাকওয়ার ব্যাপারে কোরআন মাজিদে আরও অসংখ্য আয়াত নাযিল হয়েছে যার কয়েকটি তুলে ধরছি–

এটা (কোরআন) সেই কিতাব, যাতে কোনও সন্দেহ নাই, এটা মুত্তাকিদের জন্য পথপ্রদর্শক। ( সুরা, বাকারা: আয়াত-২ )

সুতরাং রোজার রাত্রে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা করো। আর রাত্রে তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাত্রের কৃষ্ণরেখা হতে ঊষার শুভ্র রেখা তোমাদের কাছে স্পষ্ট না হয়। অতঃপর সূর্য ডোবা পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কবো......যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে  পার। ( পারা: ২,সুরা: বাকারা, আয়াত:১৮৭ )

মুত্তাকি কারা? মহান আল্লাহ বলেন, মুত্তাকী তারা যারা রাতে কম ঘুমায় এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনা করে। (সুরা আয যারিয়াহ্, আয়াত:১৭-১৮ )

একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে-রমজানের এক মাসের যে কর্মসূচি আল্লাহ গ্রহণ করেছেন তা হলো ভালো মানুষ তৈরির কর্মসূচি। আর রাসূল (সা.) সেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন।

রাসূল (সা.) তাকওয়ার ব্যাপারে বলেন, মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার ওপর জুলুম করে না এবং তাকে সঙ্গীহীন, সহায়হীন ছেড়ে দেয় না। সে তার কাছে মিথ্যা বলে না ও তাকে অপমান করে না। তাকওয়া হচ্ছে এখানে, তিনি নিজের বুকের দিকে ইশারা করেন। ( মুসলিম শরিফ:২৫৬৪ )

তাকওয়া অর্জনের উপায়: তাকওয়া অর্জনের অনেকগুলো উপায় রয়েছে। এর কয়েকটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

১। আল্লাহ তায়ালার যথাযথ পরিচয় লাভ করা।

২। ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করা।

৩। আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা।

৪। পরকাল ও তার ভয়াবহতা বিষয়ে আয়াত ও হাদিস পাঠ করা।

পরিশেষে আমরা এ কথা বলতে পারি, রমজানের সিয়াম সাধনা হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বনের প্রশিক্ষণ। যদি কারও তাকওয়া অর্জিত হয়ে যায়, তাহলে সে ইহকাল-পরকাল উভয় জগতে সফল।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে মহামূল্যবান তাকওয়ার সম্পদ দানে ধন্য করুন। আমীন।