পরিবেশ সংরক্ষণে যে নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম

জলবায়ু পরিবর্তনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে চিন্তিত পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। এই পরিবর্তনের অনেক ক্ষেত্রে আমরাই দায়ী। ক্ষণস্থায়ী কিছু স্বার্থের কারণে আমরা নানাভাবে পরিবেশ-প্রকৃতির মারাত্মক ক্ষতি করছি। নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর ভরাট করে আমরা বসতি স্থাপন ও কলকারখানা নির্মাণ করছি, গাছ কেটে বন উজাড় করছি।  এসব কাজের বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে। দেখা দিচ্ছে অসহনীয় তীব্র তাপদাহ। আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে। অথচ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে আমরা এসব ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারি। কারণ, আমাদের সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সুন্দর ও নির্মল পরিবেশ-প্রকৃতি অপরিহার্য। নির্মল পরিবেশ বজায় রাখতে ইসলামও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর মহানবী (সা.)  গাছ কতটা ভালবাসতেন— বোঝা যায় এই হাদিস থেকে। তিনি বলেন, ‘যদি তুমি বুঝতেও পারো যে কিয়ামত আসছে এবং তোমার হাতে একটি গাছের চারা আছে, তবু তুমি চারাটি লাগিয়ে দাও।’ (মুসনাদে আহমদ)

হাদিস শরিফে গাছ লাগানোর বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদার কথা বিবৃত হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘গাছ লাগানো মুসলিমদের জন্য সদকা স্বরূপ।’ (বুখারি শরিফ)

একইসাথে গাছ লাগানো এমন পুণ্যের কাজ, যার সওয়াব মৃত্যুর পরও জারি থাকে। উপরোক্ত হাদিসের পরিপ্রেক্ষিতে সাহাবায়ে কিরাম বলতেন, ‘যদি কেউ গাছ লাগিয়ে মারাও যায় কিন্তু গাছ যদি বেঁচে থাকে এবং তার ফল ও ছায়া মানুষ ও পশু-পাখি যত দিন ভোগ করবে, ততদিন মৃত ব্যক্তি পুণ্য পেতে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ)

অন্যত্র মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি গাছ লাগায় এবং গাছের যত্ন করে তাকে বড় করে, সেই গাছের একটি ফলের হিসাবে তার আমলনামায় একটি করে নেকি লেখা হয়।’ (মুনসাদে আহমদ)

নির্মল পরিবেশের জন্য বিশুদ্ধ পানির গুরুত্বও অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ আকাশ থেকে পানি অবতীর্ণ করেছেন এবং পৃথিবীকে এর মৃত্যুর পর এর মাধ্যমে জীবিত করে তুলেছেন। নিশ্চয় এতে সেইসব লোকের জন্য রয়েছে এক বড় নিদর্শন যারা কথা শোনে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৬৫)

এ প্রসঙ্গে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি অবতীর্ণ করেছেন। এতে রয়েছে সুপেয় পানি। আর এ থেকেই সেসব গাছপালা উৎপন্ন হয় যেগুলোতে তোমরা গবাদি পশু চরিয়ে থাকো।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১০)

কোরআনে কারিমে আরও বলা হয়েছে,‘আর তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। এরপর আমি এ দিয়ে সব ধরনের উদ্ভিদ উদ্গত করেছি। এরপর আমি তা থেকে সবুজ তরুলতা উৎপন্ন করেছি যা থেকে সুবিন্যস্ত শস্যদানা উৎপন্ন করে থাকি।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৯৯)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদরূপে বানিয়েছেন এবং মেঘ থেকে পানি অবতীর্ণ করেছেন। এরপর তা দিয়ে তিনি তোমাদের জন্য রিজিকরূপে নানা প্রকারের ফলফলাদি উৎপন্ন করেছেন। অতএব তোমরা জেনেশুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করাবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২)

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পানি ও গাছের ভূমিকা অনন্য। এছাড়া, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, প্রাকৃতিক পশু-পাখি রক্ষা করা, বায়ু ও পানিদূষণ বন্ধ করা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমেও আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মিলেমিশে একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার তাওফিক দান করেন। আমিন।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী; শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা