মোবাইল স্ক্রিনে কোরআন পড়তে কি অজু লাগবে?

একসময় বিশেষত হাফেজদের সঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমের ছোট প্রতিলিপি থাকতো। যখন ইচ্ছা, তখন-ই সেটি খুলে তেলাওয়াত করতেন তারা। কিন্তু স্মার্ট ফোন আসার পর সেই দৃশ্য এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। হাফেজদের পাশাপাশি সাধারণ মুসলিমরাও এখন পকেট থেকে মোবাইল ফোনটি বের করে কোরআন তেলাওয়াত করেন।

এই পরিস্থিতিতে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসে— এক. মোবাইলের স্ক্রিনে দেখে দেখে কি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে? দুই. এ সময় কি অজু থাকা আবশ্যক? এবং তিন. অজু না থাকলে কতটুকু স্পর্শ করা যাবে?

মোবাইলের স্ক্রিনে কোরআন পড়ার বিষয়টি একটি আধুনিক মাসআলা। ইসলামের শুরুর যুগে বিষয়টি ছিল না, সেজন্য এটির সমাধানের ক্ষেত্রে আলেমদের মতভেদ পাওয়া যায়। 

সমকালীন বিখ্যাত ফকীহ শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে নাসের, শাইখ সালেহ ফাওযান প্রমুখ আলেমের মতে— যে বস্তুতে কোরআনে কারিম স্থায়ীভাবে লেখা থাকে, তা অজু ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নয়। যেমন কাগজে লেখা কোরআন। পক্ষান্তরে মোবাইলের স্ক্রিনে দৃশ্যমান কোরআনে কারিম স্থায়ী নয়। কিছু আলোকরশ্মির মাধ্যমে তা দৃশ্যমান হয়। সুতরাং তা অজু ছাড়া স্পর্শ করা যাবে। (আল-ইসলাম, সুওয়াল-জওয়াব, ফতোয়া: ১০৬৯৬৬১) পাশাপাশি এর ওপরে গ্লাসের আবরণও থাকে। এ কারণেও কেউ কেউ বলেন, তা অজু ছাড়া স্পর্শ করা যায়। 

তবে বিষয়টি যেহেতু পবিত্র কোরআনের মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে সম্পর্কিত। এজন্য ভিন্ন ফতোয়া দিয়েছে উপমহাদেশের বিশ্বখ্যাত দুই ইসলামি বিদ্যাপীঠ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ ও পাকিস্তানের জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া করাচি। করাচির প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটের ১৪৪০০৭২০০৩৬৮ নম্বর ফতোয়ায় বলেছে, মোবাইলের স্ক্রিনে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা জায়েজ। আর অজু না থাকলে স্পর্শ করা ছাড়া শুধু স্ক্রিন দেখে দেখে তিলাওয়াতেও কোনও সমস্যা নেই।

দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ায় বলা হয়েছে, যখন মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে পবিত্র কোরআনের আয়াত স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হবে, তখন তা অজু ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নেই। এক্ষেত্রে যদিও স্ক্রিনে ভেসে ওঠা আয়াতের ওপর গ্লাসের (কাঁচ) আবরণ ও প্রতিবন্ধকতা থাকে কিন্তু বাস্তবে তা পৃথক কোনও আবরণ নয়। এজন্য মোবাইল স্ক্রিনের কোরআন অজু ছাড়া স্পর্শ করা যাবে না।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী; শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা