রমজান যেভাবে রহমত ও বরকত বয়ে আনে

মুমিনদের জীবনে মাহে রমজান আসে রহমত ও বরকতের সুসংবাদ নিয়ে। পবিত্র এই মাসে মুমিনরা সংযম ও সহনশীলতার উত্তম অনুশীলন করে থাকে। আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য দিনের বেলা পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকে। তাই এই মাসে আল্লাহ তায়ালাও তার মুমিন বান্দাদের প্রতি অঝোর ধারায় রহমত ও বরকত বর্ষণ করেন। বলা হয়ে থাকে, আল্লাহর দান ও প্রতিদান লাভের জন্য এই মাসের চেয়ে মোক্ষম সময় ও অবারিত সুযোগ বান্দা আর কখনও পায় না।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনও মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এই মাসেই (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৮৩৬৮)

রমজান মাসে বান্দাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ অনেক গুণে বেড়ে যায়। এই সময় তিনি নানা উপায় বান্দাদের আপন অনুগ্রহে সিক্ত করেন। এর অন্যতম নজির হলো এই মাসে একটি ফরজ আদায় করলে আল্লাহ ৭০ ফরজ আদায়ের সমপরিমাণ নেকি দেন। রাসুল (সা.) বলেন― যে ব্যক্তি এই মাসে কোনও ফরজ আদায় করবে, সে অন্যান্য সময়ের ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমান পুণ্য লাভ করবে।’ (বায়হাকি)

আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে রমজানের প্রতি রাতে প্রথম আসমানে আসেন এবং বান্দাদের ডাকেন। রাসুল (সা.) বলেন― ‘আল্লাহ তায়ালা প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছো, আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছো, আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করবো। কে আছো, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করবো। এভাবে তিনি ফজরের ওয়াক্ত স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত আহ্বান করতে থাকেন। (বুখারি, মুসলিম)

এ মাসে বান্দার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে আল্লাহ বেশি-বেশি ক্ষমারও ঘোষণা করেন। রাসুল (সা.) বলেন―রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির প্রত্যাশায় রমজানের রাতে ইবাদত-বন্দেগি করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি: ৩৭)।

অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা:) বলেন―রমজান মাসের প্রতিটি রাত ও দিনের বেলায় বহু মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির  দেন। এ মাসে প্রত্যেক মুসলমানের দোয়া কবুল করা হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৭৪৫০)।

হাদিস শরীফে এ মাসকে বরকতময় মাস বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে রমজান এসেছে, বরকতময় মাস। এ মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন’ (নাসায়ি : ২০৮৯; মিরকাত : ৪/১৩৬৫)। 

আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের বরকতে জান্নাতের দুয়ার খুলে দেন। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখেন। দুষ্ট জিনদের আটকে রাখেন। হাদিস শরীফে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন―‘যখন রমজানের প্রথম রাত হয়, শয়তান ও দুষ্ট জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার কোনও দরজা খোলা হয় না। আর জান্নাতের গেটগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কোনোটি বন্ধ করা হয় না এবং একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, হে কল্যাণ কামনাকারী, অগ্রসর হও। হে অকল্যাণ প্রত্যাশী, (গুনাহের ইচ্ছাকারী) ক্ষান্ত হও। আর প্রতি রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অনেক জাহান্নামিকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দান করেন।’ (তিরমিজি : ৬১৭; মুসতাদরাকে হাকিম : ১৫৩২)

এ মাস এমন বরকতময়, যার পুরো মাসেই রয়েছে বরকতের নানা দিক। হাদিসে এসেছে, এ মাসের প্রথম ১০ দিন রহমতের। মাঝের ১০ দিন মাগফিরাতের। শেষের ১০ দিন নাজাতের এবং রমজানের প্রথম দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইবাদতকে নিরবচ্ছিন্ন রহমত দ্বারা আচ্ছাদিত করে নেন। অর্থাৎ রমজানের প্রতিটি ইবাদতের সঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ রহমত ও বরকত দান করেন (ইবনে খুজায়মা : ১৮৮৭; শুয়াবুল ঈমান : ৩৬০৮)। 

রোজার বরকতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রোজাদারের দোয়া ফেরত দেন না। হাদিসে শরীফে এসেছে, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। ১. রোজাদার যখন ইফতার করে। ২. ন্যায়বিচারক বাদশাহ ও ৩. মজলুমের দোয়া’ (তিরমিজি : ২৫২৫)। 

রমজানের আরেকটি বরকত হলো, এ মাসে ওমরাহ আদায় করলে হজের সমান হয় (বুখারি : ১৭৮২; মুসলিম : ১২৫৬)। 

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া নূরুল উলুম পান্থশালা, নরসিংদী