হজ কার ওপর ফরজ এবং এর কী ফজিলত

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি পবিত্র হজ। হজের শাব্দিক অর্থ ইচ্ছা করা। আর ইসলামি পরিভাষায় হজ হচ্ছে— নির্ধারিত শর্তসহ নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ পদ্ধতিতে বিশেষ ইবাদত করার জন্য মক্কায় গমনের ইচ্ছা করা। সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর গোটা জীবনে একবার হজ করা ফরজ।

হজ মূলত শারীরিক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত একটি ইবাদত। তাই উভয় দিক থেকে সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর হজ পালন করা ফরজ। মানে— হজ আদায়ে সক্ষম এমন শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচাপাতি ও আসবাবপত্রের অতিরিক্ত হজে যাওয়া-আসার ব্যয় এবং হজ আদায়কালীন সাংসারিক ব্যয় নির্বাহে সক্ষম, সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর হজ আদায় ফরজ। হজ প্রত্যেক মুসলমানের ওপর সারা জীবনে একবারই ফরজ হয়। একবার ফরজ হজ আদায়ের পর পরবর্তী হজগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে।

হজের প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের ওপর আল্লাহর জন্য এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭)

হজের ফজিলত বর্ণনা করে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করলো এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেদিন সে মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫২১) 

আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘...কবুল হজের প্রতিদান শুধুমাত্র জান্নাত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৭৭৩)

রাসুল (সা.) নারীদেরও হজ পালনের জন্য বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। তাহলে আমরা (নারীরা) কী জিহাদ করবো না?  উত্তরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না; তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হলো মাবরুর হজ।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫০২) 

অনুরূপভাবে হজকে বৃদ্ধ, দুর্বল ব্যক্তি ও শিশুদের জন্যও জিহাদ আখ্যায়িত করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বৃদ্ধ, দুর্বল ও নারীর জিহাদ হলো হজ ও উমরা।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৯৪৫৯) 

হাদিস শরিফে সুন্দরভাবে হজ সম্পন্নকারীকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কেউ যদি হজ পালনরত অবস্থায় ইন্তেকাল করে, তার জন্যও রয়েছে বিরাট সুসংবাদ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। হঠাৎ সওয়ারি থেকে পড়ে তার মৃত্যু হলে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তাকে বড়ই পাতার পানি দ্বারা গোসল দাও এবং তার কাপড়দুটি দিয়েই তাকে কাফন পরাও। তবে তার মাথা ও চেহারা ঢাকবে না। কেননা, কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উঠবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১২০৬)

এজন্য আমাদের কারও যদি হজ করার সামর্থ্য হয়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত তা আদায় সম্পন্ন করা। কারণ, হজ ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব করলে পরে সামর্থ্য হারিয়ে ফেললে বা মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তায়ালার কাছে অপরাধী হিসেবে হাজির হতে হবে। এজন্যই হাদিস শরিফে হজ ফরজ হওয়ামাত্র তা আদায় করার তাগিদ ও হুকুম দেওয়া হয়েছে। 

হজরত ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ, যে কোনও সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৮৩৩)

ফরজ হওয়ার পরও যারা হজ আদায়ে গড়িমসি করবে, তাদের জন্য হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিজিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহের হজের উদ্দেশে আগমন না করে তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত।’ (সহিহ ইবনে হিববান, হাদিস: ৩৬৯৫)

হজ করার শক্তি-সামর্থ্য ও অর্থ-বিত্ত থাকার পরও যে ব্যক্তি হজ করে না, তার সম্পর্কেও হাদিস শরিফে কঠোর হুমকি প্রদান করা হয়েছে। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ করে না সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খ্রিষ্টান হয়ে তার কোনও পরোয়া আল্লাহর নেই।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/৫৭৮) 

আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করেন এবং সামর্থ্যবান হলে হজ পালনের তাওফিক দিন। আমিন

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষক, মারকাযুল হুদা মাদ্রাসা, ঢাকা।