একজন মানুষের ওপর সর্বপ্রথম যে ফরজটি আরোপিত হয়, তা হলো— ঈমান। ইসলামের দৃষ্টিতে আদম সন্তানের জন্য ঈমানের চেয়ে দামি আর কিছু নেই। শরিয়তের পরিভাষায় ঈমান হচ্ছে— ইসলামকে অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আমলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। (শারহুল ফিকহিল আকবর, মোল্লা আলী কারী (রহ.), পৃষ্ঠা: ১৪১-১৫০)
ঈমানবিহীন সৎকর্ম আখিরাতে আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। একজন মানুষ যতো ভালো কাজই করুক, যদি তার ঈমান না থাকে, তাহলে ওই ভালো কাজের প্রতিদান আল্লাহ তাকে দুনিয়াতে দিয়ে দেবেন, কিন্তু আখিরাতে তার জন্য কিছুই থাকবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তারা (ঈমানবিহীন ব্যক্তিরা দুনিয়ায়) যা কিছু আমল করেছে, আমি তার ফয়সালা করতে আসব এবং সেগুলো শূন্যে বিক্ষিপ্ত ধুলোবালি (এর মতো মূল্যহীন) করে দেবো।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ২৩)
অন্যত্র এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে (ঈমান নেই), তাদের কর্ম সেই ছাইয়ের মতো, প্রচণ্ড ঝড়ের দিনে তীব্র বাতাস যা উড়িয়ে নিয়ে যায়। তারা যা কিছু উপার্জন করে, তার কিছুই তাদের হস্তগত হবে না। এটাই চরম পথভ্রষ্টতা।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ১৮)
হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেন, ‘(আল্লাহ তাআলার রীতি হলো) ‘আল্লাহ কোনও মুমিনের ওপর জুলুম করেন না। তার ভালো কাজের প্রতিদান দুনিয়ায়ও দান করেন, আখিরাতেও দান করবেন। আর কাফিররা নিঃস্বার্থে যেসব ভালো কাজ করে, তার প্রতিদান তাদের কেবল দুনিয়াতেই দিয়ে দেওয়া হয়। পরকালে তারা আর কিছুই পাবে না।’ (মুসলিম শরিফ)
আল্লাহর কাছে ভালো কাজ কখনও ঈমানের বিকল্প হয় না। কারণ, মক্কার অনেক মুশরিক গর্ব সহকারে মুসলমানদের বলত, মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ ও হাজীদের পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আমরাই করে থাকি। এর ওপর অন্য কারও আমল শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার হতে পারে না। ইসলাম গ্রহণের আগে হজরত আব্বাস (রা.) বদর যুদ্ধে বন্দি হন এবং এ সময় তার মুসলিম স্বজনেরা তাকে বাতিল ধর্মে বহাল থাকায় বিদ্রুপের সঙ্গে বলেন, আপনি এখনও ঈমান থেকে বঞ্চিত রয়েছেন? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা ঈমান ও হিজরতকে বড় শ্রেষ্ঠ কাজ বলে মনে করেছো। কিন্তু আমরাও তো মসজিদুল হারামের হেফাজত ও হাজীদের পানি সরবরাহের কাজ করে থাকি, তাই আমাদের সমান অন্য কারও আমল হতে পারে না।
হজরত আব্বাস (রা.)— এর ঠিক এই কথার পর পরই পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি নাজিল হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানো ও মসজিদুল হারাম আবাদ করাকে ওই ব্যক্তির মতো বিবেচনা করো, যে আল্লাহ ও কেয়ামত দিনের প্রতি ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। তারা আল্লাহর কাছে বরাবর নয়। আর আল্লাহ জালিম কওমকে হিদায়াত দেন না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১৯)
সুতরাং উভয় জগতে ভালো কাজের প্রতিদান পেতে হলে ঈমানের বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআন বলছে, ‘পুরুষ বা নারীর মধ্যে যে কেউ নেক আমল করলে, (শর্ত হলো) যদি ঈমানদার হয়, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হবে না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১২৪) অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আখিরাত কামনা করে এবং সেই জন্য যথাযথ চেষ্টা করে, (শর্ত হলো) যদি সে মুমিন হয়, তবে এরূপ চেষ্টার পরিপূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হবে।’ (সুরা ইসরা, আয়াত : ১৯) আল্লাহ আমাদের ঈমানের সঙ্গে ভালো কাজ করার তাওফিক দান করেন। আমিন
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও মাদ্রাসাশিক্ষক