আ.লীগের অনুসন্ধান

সহিংসতা-খুন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নয়!

আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকাগত ৪ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা অন্তত ১০৩ জন ছাড়িয়ে গেছে। অবশ্য বেসরকারি সংগঠন সুজনের দাবি, মৃত্যের সংখ্যা ১২০-এর বেশি।কিন্তু সংখ্যা যাই হোক,ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনে করছে এসব সহিংসতা,সংঘর্ষ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়নি। হয়েছে ব্যক্তিগত আক্রোশ ও রেষারেষি থেকে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, নির্বাচনোত্তর খুন-খারাবি ও নির্বাচনের দিনের সংঘাত-সহিংসতা নিয়ে দলটির একটি অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। দুই/একটি ইউনিয়নে এর ব্যত্যয় থাকতে পারে।
আরও পড়তে পারেন: এমপি মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে মামলা
এদিকে, ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোট নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা যেসব অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তার দায়ও নিতে চায় না ক্ষমতাসীনরা। তারা বলেন, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। সেটা একান্তই তাদের বিষয়।
আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে নির্বাচনি সহিংসতাপূর্ণ এলাকাগুলোতে দলের পক্ষ থেকে সহিংসতার কারণ উদঘাটনে অনুসন্ধান চালানো হয়। সেখানে উঠে এসেছে বেশির ভাগ ইউনিয়নে হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিভিন্ন সময়ের সামাজিক ও ব্যক্তিগত রেষারেষিই দায়ী। সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি জেলার কমপক্ষে ৫০টি ইউনিয়নে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে-প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের পরে তার নিজের জেলা কুষ্টিয়ায় একজন শিক্ষক মারা যান। এ হত্যাকাণ্ডকে সবাই নির্বাচনি সহিংসতা হিসেবে প্রচার করেছে। কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সামাজিক একটা ঘটনার সূত্র ধরে তিনি মারা যান। তিনি বলেন,কুষ্টিয়া সদরের আইলচারা ইউনিয়নে নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় শাহীন আলী নামে এক হোটেল ব্যবসায়ী খুন হন। সেখানেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এটাও ব্যক্তিগত রেষারেষির ফলে হয়েছে। হানিফ বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে মারা গেছে, এমন অনেক মৃত্যুর কারণ ব্যক্তিগত, সামাজিক রেষারেষি। নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় যেসব ইউনিয়নে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার অনেকগুলোয় পেছনের কারণ অনুসন্ধান করেছি আমরা, সেখানে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। অথচ ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে নির্বাচনি সহিংসতা।

এ পর্যন্ত ৫টি ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে ৬ষ্ঠ ধাপের নির্বাচন। শনিবার (৪ জুন) ৬ষ্ঠ ধাপের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। গত ৫টি ধাপের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিভিন্ন হিসেবে দেখা গেছে শতাধিক মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আহতের সংখ্যাও অসংখ্য। কোথাও কোথাও মারা গেছেন প্রার্থীরা। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ধাপে ধাপে সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ আরও বলেন,ব্যক্তিগত রেষারেষির ফলে নিহত-আহতের ঘটনা বাড়ছে-এটা সত্যি। কিন্তু যেহেতু এগুলো সামাজিক সমস্যার কারণে ঘটছে এগুলো একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে বা বন্ধ করা সম্ভব এমন কোনও উপায় আমি দেখছি না। তবে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে।

এ প্রসঙ্গে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় নিহত-আহতের ঘটনা নিয়ে আমরা বিভিন্ন ইউনিয়নে অনুসন্ধান চলিয়েছি। কোথাও এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যে সহিংসতা হয়েছে তা সামাজিক দ্বন্দ্বের প্রভাব, এ পাড়া-ও পাড়া, খালের এপার-ওপারের দ্বন্দ্বের কারণে হয়েছে। 

 সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, সহিংসতাপূর্ণ এলাকাগুলোতে খোঁজ খবর নেওয়ার পর দেখা গেছে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটেনি। সেখানে ভিন্ন কারণও খুঁজে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়টিই বেশি উঠে এসেছে।
আরও পড়তে পারেন: ভক্তদের আবদার মেটাচ্ছেন ক্লান্ত মুস্তাফিজ

তবে সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে,নির্বাচনোত্তর সহিংসতার পেছনে কোথাও কোথাও বিএনপিরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। নির্বাচনি এলাকাগুলোতে একে অপরের মধ্যে কোনো ঝামেলার ক্ষেত্র তৈরি হলে সেখানে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ঘটনাটিকে উস্কে দেয়,বড় করে ফেলে।  তাদের মতে, বিএনপির লক্ষ্যই হল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করা। সেটা তারা কৌশলে করছে। বিএনপি যেহেতু মাঠে দাঁড়াতে পারছে না, নির্বাচন করছে না, তাই এসব ঘটনা ঘটাতে তাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনি এলাকায় সহিংসতার জন্যে বিএনপিরও উস্কানি আছে। কারণ, তাদের লক্ষ্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। কিছু কিছু ইউনিয়নে সহিংসতার পেছনে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার তথ্য আমাদের কাছে আছে।

 জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা নির্বাচন না করে নির্বাচনী মাঠে ব্যস্ত আছে কিভাবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় সে কৌশল খুঁজে বের করতে। এটি তাদের কেন্দ্রীয় কৌশল।  

 

পিএইচসি/এমএসএম /