ইসি পুনর্গঠন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি খালেদার

খালেদা জিয়া

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন হলেই চলবে না।পরবর্তীতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এই দুটো বিষয় হলেই মনে করি, দেশে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। যেখানে সকলে ভোট দিতে যেতে পারবে।’

শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মহিলা দলের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার মহিলা দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর মহিলা দলের জেলা নেত্রীরা সংগঠনের নানা বিষয়ে কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি আজ্ঞাবহ কমিশন। সরকার যেদিকে মাথা হেলাতে বলে,এটা সেদিকেই মাথা হেলায়। যা করতে বলে সেটাই করে।’ আব্দুর রকিব কমিশনকে খালেদা জিয়া অথর্ব কমিশন বলে মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়া দাবি করেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে একদম পুনর্গঠন করতে হবে। পুনর্বিন্যাস করতে হবে।’

সময়মত কর্মসূচি দিয়ে বের হব

বিএনপির সমাবেশকে সরকার ভয় পায় বলে মন্তব্য করে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার ভয় পায় বলেই ৭ নভেম্বর আমাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার ভয় পায়। কারণ, আমাদের সমাবেশে জনগণ আসে। তাদের মতো টাকা-পয়সা দিয়ে লোক আনি না। আমরা গুণ্ডাপাণ্ডা দিয়ে সমাবেশ করি না।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে রাখা যায় না। মানুষের মুখ বন্ধ রাখা যায় না। তেমনি মানুষকে দীর্ঘদিন ঘরের ভেতরে বন্দি করে রাখা যাবে না। আমাদেরকে বের হতে হবে সময় মতো। আমরা বের হব। আমরা কর্মসূচি দেব। ইনশাল্লাহ জনগণকে আমরা পাশে পাব, এই বিশ্বাস আমাদের আছে। তাদের ভরসা নেই। তারা যে মাটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সেই মাটির ওপর দাঁড়িয়েও তারা ভরসা পায় না।’ খালেদার ভাষ্য, ‘তারা জানে, কখন মাটি সরে যাবে, আর তারা নিচে পড়ে যাবে। এজন্যই প্রতিটি পদে তারা আমাদের বাধা সৃষ্টি করছে, যেন আমরা কোনও কাজ করতে না পারি। আমাদের মনোবল শক্ত আছে। মিথ্যে কিছুদিন টিকে থাকলেও তা জয়ী হতে পারে না ।’   

জবাবদিহিমূলক পার্লামেন্ট হবে

খালেদা জিয়া বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ও নিরপেক্ষ কমিশনের অধীনে নির্বাচন হলেই দেশে আইনের শাসন ফিরে আসবে এবং একটি জবাবদিহিমূলক সুন্দর পার্লামেন্ট হবে। এই পার্লামেন্টে বিতর্ক হবে। সরকারি দলও থাকবে, বিরোধী দলও থাকবে। তাদের মধ্যে সম্পর্ক যেমন ভালো থাকবে তেমনি প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক হবে, বিদেশে যা হয়।’ এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার ভাষ্য, ‘দেশে কী ঘটছে, না ঘটছে প্রত্যেকটা জিনিস নিয়েই যেন বিতর্ক হয়।’

বিচারবিভাগের ক্ষমতা নেই, সরকারই সব নিয়ন্ত্রণ করছে

বিএনপি প্রধান বলেছেন, ‘বিচার বিভাগের কোনও ক্ষমতা নেই। আজকে সরকারই সব নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশে এত দুর্নীতি, করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না।’ কোনও জবাবদিহিতা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। তার দাবি, ‘কার কাছে জবাব দেবে,তারাইতো তো সর্বেসর্বা।’ ব্যাংক থেকে টাকা চলে যায়, এমন তথ্য আগে শোনেননি  খালেদা জিয়া। এসময় তিনি টেন্ডারবাজির সমালোচনা করেন। কৃষক তার সত্যিকারের কৃষিপণ্যের মূল্য পায় না বলেও দাবি করেন বিএনপি প্রধান।

তারা-তারাই লুট করছে

দরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি চাল সরকারি দলের লোকেরা মেরে দিচ্ছে এমন অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গরীব মানুষকে দেওয়ার জন্য বললেও গরীবরা পাচ্ছে না। আজকে তারা-তারাই লুট করছে। তারা-তারাই মেরে দিচ্ছে। তারাই সব করছে। গরীব মানুষের চাল আওয়ামী লীগই পাচ্ছে। সার্বিকভাবে দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।’

আমরা কারও নির্দেশে চলি না

খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে কতরকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, কারও কথা শুনে চলার জন্য নয়। বা আমরা কারও শৃংখলাবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ, এটা সকলকে বুঝতে হবে। দুনিয়ার যারা বোঝে না, তাদেরকেও আমাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশের ১৬ কোটি লোক আমরা। কাজেই ১৬ কোটি মানুষ কারও ডিকটেশনে, কারও নির্দেশে চলব না। শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেব, বা দেশের মানুষের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা সবকিছু মেনে নিয়ে, যা বলবে তা করব, তা আমরা মেনে নিতে পারি না।’ জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে বিএনপিও তা মেনে নেবে না বলে জানান খালেদা জিয়া। 

খালেদা জিয়া বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সময় এসেছে। আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। সেজন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে।’

 এসটিএস/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন: বিএনপির সমাবেশকে সরকার ভয় পায়: খালেদা জিয়া