আ. লীগের ধানমণ্ডি কার্যালয়ে নেতাদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

আওয়ামী লীগআওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের দফতর সেলে দলীয় এক নেতার বিরুদ্ধে অন্যজনের অভিযোগের স্তূপ জমেছে। স্থানীয় নেতার অত্যাচার-নির্যাতন, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে এসব অভিযোগ পাঠানো হয়েছে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে।
ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে সারাদেশ থেকে এসব অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। ডাকযোগে, কুরিয়ার সার্ভিসে অথবা কেউ-কেউ সরাসরিও অভিযোগ দফতরে জমা দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এসব অভিযোগ পাঠান। দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অভিযোগগুলোর গুরুত্ব দেখে স্ব-স্ব বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে পাঠান। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু অভিযোগ থাকলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযুক্ত নেতাদের ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডেকে এনে সমাধানের চেষ্টা করেন।
এ প্রসঙ্গে দলীয় সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের দু’জন অফিস সহকারী জানান, ধানমণ্ডির কার্যালয়ে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের ভেতরে কিছু  সামান্য ঘটনা রয়েছে, কিছু গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। জঘন্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব। এ ধরনের অভিযোগের বিষয় মূলত এমপি বনাম জেলা আওয়ামী লীগের নেতার বিরোধ। এগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে দলের সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় অন্য নেতাদের নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেন।

জানা গেছে, গত এক মাসে অন্তত এক ডজন সংসদ সদস্যকে ডেকে পাঠানো হয়েছে দলীয় কার্যালয়ে। এর বাইরে অন্য অভিযোগগুলো সাংগঠনিক সম্পাদকদের হাতে দিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন দলের সাধারণ সম্পাদক।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অগণিত অভিযোগ ধানমণ্ডির কার্যালয়ে জমা হয়ে আছে। স্থানীয় নেতার অত্যাচার-নির্যাতন, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে এসব অভিযোগ পাঠানো হয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। অভিযোগগুলো পাঠানো হয় দলীয় সভাপতির বরাবরে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর কিছু কিছু অভিযোগের সত্যতা মিলছে। কোনও কোনও অভিযোগের সত্যতা মিলছে না। অবশ্য এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে ডেকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে।   

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধানমণ্ডির কার্যালয়ে নেতারা অভিযোগ পাঠান। প্রায় দিনই এসব অভিযোগ আসে। অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগগুলো সাংগঠনিক সম্পাদকদের হাতে দিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।’ কেমন অভিযোগ জমা পড়েছে? জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, ‘অগণিত।’

এ প্রসঙ্গে দলের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সংক্ষুব্ধ নেতারা বিভিন্ন জায়গা থেকে দলের আন্তঃকোন্দল, অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বিষয়ে অভিযোগ লিখে কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন। এগুলো তাৎক্ষণিকভাবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানানো হয়। গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে সাধারণ সম্পাদক তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেন।’ তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তদের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নিজে কথাও বলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করেন। অভিযোগগুলো সংরক্ষণ করা হয়।’

দফতর সূত্রে জানা গেছে, ‘কিছু অভিযোগ রয়েছে ব্যক্তিগত ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ করে। এসব অভিযোগ উল্লেখ থাকে, অমুক নেতা রাজাকারের সন্তান, বিএনপি-জামায়াত ঘেঁষা। শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তবে বিস্তর অভিযোগ বালু মহাল ও জমি দখল নিয়ে।’ এ ধরনের অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

/এমএনএইচ/এমপি/আপ-এপিএইচ/

আরও পড়ুন: বাঘাইছড়ির পৌরমেয়র হলেন আ.লীগের জাফর আলী