প্রার্থী বাছাই ও ইশতেহার তৈরিতে হাত দিয়েছেন এরশাদ

এইচ এম এরশাদএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী বাছাই ও ইশতেহারের কাজ শুরু করেছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দলীয় দায়িত্বশীল নেতাদের তৈরি তালিকা ধরে বিভিন্ন বিবেচনায় সম্ভাব্য প্রার্থীকে ডেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। অন্যদিকে, গত ১ জানুয়ারি দেওয়া এরশাদের বক্তব্যের রেশ ধরে দলের নির্বাচনি ইশতেহার তৈরিও প্রক্রিয়াধীন। দলের শীর্ষস্থানীয় দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী বাছাই শুরু হয়েছে। কাউকে-কাউকে বলছি, পরামর্শ দিচ্ছি।’
প্রার্থী বাছাই শুরু করেছেন এরশাদ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে জাপা। দলের চেয়ারম্যান এরশাদ স্বয়ং প্রার্থীদের ডেকে পরামর্শ দিচ্ছেন। নিজ নিজ এলাকায় যাতায়াত বাড়াতে ও কাজ করতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘প্রার্থী বাছাই শুরু করেছি।’
জাপার একটি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে জেলার দায়িত্বে থাকা নেতাদের কাছ থেকে তালিকা নিয়েছেন এরশাদ। এই তালিকা ধরে তিনি নিজে থেকেই প্রার্থীদের ডেকে কথা বলছেন। যদিও সম্মিলিত জাতীয় জোট থাকায় শরিকদের বিষয়টিও মাথায় রাখছেন এরশাদ। এ কারণে সরাসরি মনোনয়ন চূড়ান্ত করা থেকে বিরত রয়েছেন তিনি।
জাপার কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান আমাদের থেকে নাম নিয়েছেন। আমরা যারা জেলার দায়িত্বে ছিলাম, তালিকা করে তাকে দিয়েছি। এখন মনোনয়নের বিষয়টি তিনিই দেখবেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ডেকে নির্বাচনের আউটলাইন বাতলে দিচ্ছেন এরশাদ।’
এ প্রসঙ্গে জাপা প্রধান এরশাদ বললেন, ‘জাপা নির্বাচন করবে জোটগতভাবে। এ কারণে জোটের সঙ্গে বৈঠক করেই মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।’
ইশতেহারে প্রাধান্য পাচ্ছে তিনটি বিষয়
জাতীয় পার্টির দলীয় প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তার দলের ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রতিপাদ্য থাকবে তিনটি বিষয়— প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থার পদ্ধতির সংস্কার ও পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন। এই তিনটি বিষয়ই ইশতেহারের মূল বিষয় হিসেবে থাকবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে এই বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করব।’
জাপা সূত্র জানায়, এ বছরের প্রথম দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের জাতীয় পার্টির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এরশাদের বক্তব্যে আগামী নির্বাচনে ইশতেহারের বিষয়ে ইঙ্গিত ছিল। তিনি প্রাদেশিক সরকার চালু করার কথা জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থাও প্রবর্তন করার ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন। পরে গত বছরের শেষের দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত সংলাপেও নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তনের কথা বলেন।
এদিকে জাপার কোনও কোনও নেতা নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির মতো ভিশন ঘোষণার সম্ভাবনার কথা বললেও এরশাদ তা খারিজ করে দেন। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘কোনও ভিশন দেওয়ার পরিকল্পনা নেই আমাদের।’
জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে আগে ইশতেহার ঘোষণা করার রেওয়াজ থাকলেও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও প্রেসিডিয়ামের সদস্য, এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় ইশতেহার তৈরির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। যদিও সুনীল শুভরায় বাংলা ট্রিবিউনকে এ প্রসঙ্গে কিছু বলেননি। তিনি কিছুদিন পর কথা বলতে প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন।
জাপা সূত্র জানায়, নির্বাচনের জন্য ৩শ আসনেই প্রার্থী প্রস্তুতি রাখছে জাপা। এক্ষেত্রে জোটের শরিক দলগুলোকে মাথাপিছু দুই থেকে তিনটি আসনে সমর্থন দেওয়ার চিন্তা আছে দলটির। এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের বেশিরভাগ দলই অনিবন্ধিত। জাপা ও ইসলামী ফ্রন্ট ছাড়া বাকিদের সংগঠনের পাশাপাশি কোনও জনভিত্তি নেই। এমনকি রাজনৈতিক কার্যালয়ও নেই বেশিরভাগ দলের।

আরও পড়ুন-

বৃহস্পতিবার সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক বিএনপির

কবি নজরুল উপমহাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর: খালেদা জিয়া

/টিআর/টিএন/