একাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের তরুণ নেতাদের কেউ ঢাকায় নেই। ঈদকে কেন্দ্র করে এসব তরুণ নেতৃত্ব নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। ঈদকে উপলক্ষ করে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে তারা নিজের এলাকায় ঈদের জামাত আদায়ের পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেউ জরুরি কারণে ঈদের সময় নির্বাচনি এলাকায় থাকতে না পারলেও হয় ঈদের আগে ঘুরে এসেছেন না হয় ঈদের পরপরই এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে ধরে নিয়েই নির্বাচনি ছক কষছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি অংশ নিলে নির্বাচন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ওই নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়নের বিষয়টি ভাবছে ক্ষমতাসীন দল। তাই যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে প্রার্থীদের জনসম্পৃক্ততা ও এলাকায় জনপ্রিয়তাকে। এলাকার জনগণের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি নৌকার টিকিট তার হাতেই যাবে এমন আভাস দিয়ে রেখেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তাই, দল বা এলাকায় যতই প্রভাবশালী হোন না কেন ভোটারদের প্রিয়পাত্র না হলে সে ব্যক্তির মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমনকি তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য হলেও মনোনয়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ইঙ্গিত আছে দলটিতে। যার কারণে মনোয়ন প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতারা এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দিয়েছেন।
দলটির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় অবস্থান করলেও তাদের বেশিরভাগই প্রতি সপ্তাহে এলাকায় যাচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন সব ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যেমন মিশছেন, তেমনি সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়েও লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন, সমস্যার কথা শুনছেন। এলাকার মানুষের আপদ-বিপদে সাড়া দিচ্ছেন। বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। রমজানকে কেন্দ্র করে এসব তরুণ নেতা প্রায়ই এলাকায় ইফতার পার্টিতে অংশ নিয়েছেন। এখন ঈদকে কেন্দ্র করে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে নিজ নিজ ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায়সহ এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে মত বিনিময় করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনোনয়ন প্রত্যাশী অর্ধ শতাধিক তরুণ নেতৃত্ব ইতোমধ্যেই আলোচিত হয়ে উঠেছেন। আলোচিতদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩), কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন (চট্টগ্রাম-১৫), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন (পটুয়াখালী-১), সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন (নেত্রকোনা), মিসবাহউদ্দিন সিরাজ (সিলেট), এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর-৩), কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবীর কাউসার (নরসিংদী-৫), কেন্দ্রীয় নেতা মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর), ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাহে আলম (বরিশাল-২), এএইচএম মাসুদ দুলাল (নারায়ণগঞ্জ-৩), খলিলুর রহমান (বরগুনা-১), মাহমুদ হাসান রিপন (গাইবান্ধা-৫), কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর-৪), সাইফুজ্জামান শিখর (মাগুরা-১), শফি আহমেদ (নেত্রকোনা-৪), অজয় কর খোকন (কিশোরগঞ্জ-৫), পনিরুজ্জামান তরুণ (ঢাকা-১), ড. আওলাদ হোসেন (ঢাকা-৪), যুবলীগের ইসমাঈল হোসেন সম্রাট (ঢাকা-৮), যুবলীগের মঈনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু (ঢাকা-১৫), শেখ সোহেল রানা টিপু (রাজবাড়ী-১), নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা (চাঁদপুর-৫), মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন (ফেনী-৩), একই আসনে অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা (পিরোজপুর-১), আশরাফ হোসেন (পিরোজপুর-৩), বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট-৪), আকতারুজ্জামান বাবু (খুলনা-৬), আব্দুল মালেক (পটুয়াখালী-২), জিয়াউল হক জুয়েল (পটুয়াখালী-২), ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবদুল ওয়াহিদ (মুন্সীগঞ্জ-২), ফয়সাল বিপ্লব (মুন্সীগঞ্জ-৩), অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাউসার (ঢাকা-৮), গোলাম রব্বানী চিনু (ঢাকা-১৩), ইকবাল হোসেন সবুজ (গাজীপুর-৩), ড. আবদুস সোবহান গোলাপ (মাদারীপুর-৩), ইকবাল হোসেন অপু (শরীয়তপুর-১), মঈন উদ্দিন মঈন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), এম এ মমিন পাটোয়ারী (লক্ষ্মীপুর-১), নাফিউল ইসলাম নাফা (নীলফামারী-৪), রবিউল ইসলাম রবি (ঠাকুরগাঁও-৩), ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন-অর-রশীদ (বরগুনা-২)। এছাড়াও আরও অনেক তরুণ নেতৃত্ব মনোনয়নের প্রত্যাশায় নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থায়ীভাবে রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী এসব নেতার প্রায় সবাই এবারের ঈদুল ফিতরে এলাকায় অবস্থান করছেন।
নেত্রকোনা-৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী অসীম কুমার উকিল নিয়মিতই নির্বাচনি এলাকায় যাতায়াত করছেন। সোমবার ঈদের দিন প্রথম বেলা ঢাকায় থাকলেও দুপুর নাগাদ তিনি নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন। নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর সময় দুপুর ২টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সব দলের অংশগ্রহণে আগামী দিনের নির্বাচন হবে। এই নির্বাচন হবে গ্রহণযোগ্য। আমি মনে করি ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের কারিগরেরা ওই নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন। মন মানসিকতায় আধুনিক ও রাজনৈতিক মাঠের অভিজ্ঞদের নিয়ে আগামী সংসদ সাজানো হবে। সেই সংসদের একজন সদস্য হয়ে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করতে চাই। আমার বিশ্বাস, আমার রাজনৈতিক মাঠের লড়াই ও সংগ্রামের অভিজ্ঞতা মনোনয়নের প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা করবে।’
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী আমিনুল ইসলাম আমিন ঈদ করছেন তার নির্বাচনি এলাকায়। দিনের কার্যক্রম উল্লেখ করে বাংলা ট্র্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমি সাতকানিয়ার গ্রামের বাড়ির ঈদগাহে নামাজ আদায় করেছি। জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছি। আগামী ৩ দিন আমি নির্বাচনি এলাকায় থাকবো। এলাকা ঘুরে জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করবো। তাদের কথা শুনবো। আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা তুলে ধরবো।’
তিনি আরও জানান, ‘আমি এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে থাকতে চাই। তাই সময়-সুযোগ হলেই তাদের কাছে ছুটে যাই। আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের শক্তিই জনগণ। তাই যত বেশি জনগণবেষ্টিত থাকা যায়, সেই চেষ্টা করি।’
বরগুনা-১ আসনের মনোয়ন প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা খলিলুর রহমান বলেন, ‘নিজের এলাকায় ঈদ উদযাপন করছি। আমি সব সময় এলাকার জনগণের সঙ্গে আছি, থাকবো। জনগণের একজন হয়ে সেবা করতে চাই। দল থেকে মনোনয়ন পেলে অবশ্যই আমি জিততে পারবো বলে মনে করি।’
ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলাকার জনগণের পাশে থাকতে চাই। তাদের জন্য কাজ করতে চাই।’
তরুণ নেতৃত্বের সম্ভাবনা এবার ভালো মন্তব্য করে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘এলাকায় জনপ্রিয় নেতারাই এবার মনোনয়ন পাবেন। তৃণমূলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশীর গ্রহণযোগ্যতাকে মনোনয়নের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
/টিএন/