খায়রুল হককে অপসারণের দাবি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের

এবিএম খায়রুল হকবাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে এবিএম খায়রুল হককে অপসারণ ও তার গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে মন্তব্য করায় এ দাবি তুলেছে তারা।  শুক্রবার (১০ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের পদত্যাগ ও গ্রেফতার দাবি, সরকারের মন্ত্রীদের সুপ্রিম কোর্টকে হেয় প্রতিপন্ন করে বক্তব্য প্রদানের প্রতিবাদে এবং  নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরি বিধিমালার গেজেট প্রকাশের দাবিতে আগামী রবি, বুধ ও বৃহস্পতিবার সারাদেশে সব ‘বার’ এ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তার ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ে বলেছেন যে, বিচারপতিদের অবসরে যাওয়ার পরে কোনও সরকারি দায়িত্ব নেওয়া উচিত নয়। তিনি নিজেই নিজের রায় ভঙ্গ করে আজকে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছেন।’

সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যেসব সাংবিধানিক পদ আছে, সেগুলোর শপথের কথা বলা আছে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের শপথের কোনও বিধান নেই। চেয়ারম্যান প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী মাত্র। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তার বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে, কোড অব কনডাক্ট আছে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে খায়রুল হক সাহেবেরও কোড অব কনডাক্ট আছে। তিনি কোড অব কনডাক্ট অনুযায়ী সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারেন না। তিনি চাকরির শর্ত ভঙ্গ করেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় সম্পর্কে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হকের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে যে তিক্ত ও প্রতিহিংসামূলক সমালোচনা করেছেন, সেটা তার চাকরির আচরণবিধির পরিপন্থী। তিনি চিফ জাস্টিস থাকা অবস্থায় একটি রায়ে বলেছিলেন-সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক অবসরের পরে লাভজনক কোনও পদে চাকরি করতে পারবেন না। তিনি কত বড় ভণ্ড হলে নিজের রায়ের কথা নিজেই ভঙ্গ করেছেন।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘তত্ত্বাধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে এবিএম খায়রুল হক দেশকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।গণতন্ত্রকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্য বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকই দায়ী। প্রধান বিচারপতি থাকার সময় সরকারের সঙ্গে একের পর এক গোপন কারসাজিতে লিপ্ত থেকে শেখ হাসিনার মনোবাসনা পূরণ করতে সংবিধানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন।  এ ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক দেশের গণতন্ত্রের জন্য সর্বোচ্চ খারাপ নজির স্থাপন করে গেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি যে তা করেছিলেন তার বর্তমান বক্তব্যে সেটি আবারও জনগণের কাছে প্রমাণিত হলো। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, সেটিও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করেছেন। পরে এর পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়ে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে পুরস্কার হিসেবে ১০ লাখ টাকাও নিয়েছেন চিকিৎসার কথা বলে, যা সেসময় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সরকারের এধরনের চাকরি গ্রহণ করা নজীরবিহীন এবং আত্মবিক্রয়ের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। ভবিষ্যতে হয়তো আরও বড় কোনও পুরস্কারের আশায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে তিনি মনগড়া কথা বলেছেন। ভবিষ্যতে তিনি হয়তো আরও বড় ধরনের পুরস্কারের আশা করছেন।   যুক্তি, বিবেকবর্জিত ও চাকরি লোভী বিচারপতি হিসেবে তার ঠাঁই হবে ইতিহাসের আস্তকুঁড়ে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিতি ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ।

/সিএ/এপিএইচ/