এবারও ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে কেক কাটছেন না খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়াগত বছরের মতো এবারও ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে জন্মদিনের কেক কাটছেন না বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর কারণ হিসেবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, চলমান রাজনৈতিক সংকট ও বন্যার অবনতিসহ নানা সমস্যার কথা জানিয়েছে দলটির একট সূত্র।  

বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে জন্মদিন পালন না করার পেছনে রাজনৈতিক চাপের চেয়ে বেশি বিবেচনা করা হচ্ছে দেশের চলমান রাজনৈতিক ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতিকেই। এছাড়া, সম্প্রতি হাওরে খাদ্যসংকটের বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে। জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার গণমাধ্যম বিভাগের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গণমাধ্যমকে জানানোর মত কিছু জানানো হয়নি আমাকে।’

একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে থাকলেও সেখানে তার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কেক কাটার কোনও সম্ভাবনা নেই। যদিও দেশটিতে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীরা আড়ম্বরপূর্ণভাবে জন্মদিন পালন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। 

বাংলা ট্রিবিউনের লন্ডন প্রতিনিধি মুনজের আহমেদ চৌধুরী জানান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ বলেছেন, ‘জাঁকজমকভাবে ম্যাডামের জন্মদিন পালন করা হবে। তবে কেক কত পাউন্ডের হবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। কাল (সোমবার)নাগাদ বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’ সূত্র এও জানায়, পারিবারিকভাবে জন্মদিনের কেক কাটা বা না কাটার বিষয়টি এখনও অজানা। পরিবারের সদস্যদের বাইরে এ নিয়ে পরিষ্কার কোনও তথ্য পাওয়া যাবে না।

কয়সর এম আহমদ আরও জানান, ১৫ই আগ‌স্ট এবার কোনও আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দে‌বেন না খা‌লেদা জিয়া। তবে তিনি এবার লন্ড‌নে থাকায় সেখা‌নে নানা আয়োজ‌নে পা‌লিত হ‌বে তার জন্ম‌দিন। মূল অনুষ্ঠান আয়োজন কর‌ছে যুক্তরাজ্য বিএন‌পি। মুনজের আহমেদ চৌধুরী জানান, সোমবার (১৪ আগস্ট) লন্ড‌নে‌র র‌য়েল রি‌জে‌ন্সি হ‌লে বিএন‌পির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়‌নের অনুষ্ঠান রয়েছে। সেখা‌নে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তা‌রেক রহমান যোগ দে‌বেন।

খালেদা জিয়ার প‌া‌রিবারিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধি জানান, ছে‌লে, দুই পুত্রবধূ ও নাত‌নিরা পা‌রিবা‌রিক ঘ‌রোয়া আয়োজ‌নে খালেদা জিয়ার জন্ম‌দিন পালন কর‌বেন।

২০১৬ সালের আগে প্রতিবছরই ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাড়ম্বরে নিজের জন্মদিন উদযাপন করতেন খালেদা জিয়া। তবে গত বছর রাজনৈতিক মহলে অনেকটা বিস্ময় সৃষ্টি করে প্রথম প্রহরে জন্মদিনের কেক কাটেননি তিনি।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বরাবরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার বিয়োগান্তক দিনটিতে খালেদা জিয়ার কেক কেটে জন্মদিন পালন না করার আহ্বান ছিল। ২০১৫ সালে কেক না কাটার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ওই বছরের এপ্রিলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, জাতীয় নেতাদের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। জাতীয় নেতাদের নিয়ে বিতর্ক বন্ধ করতে হবে। জাতীয় নেতাদের নাম নিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামও বলেছিলেন খালেদা জিয়া। গত বছর দলের জাতীয় কাউন্সিলেও তিনি জাতীয় নেতাদের সম্মান করতে সব দলকে আহ্বান জানান।

ধারণা করা হচ্ছে, এই অবস্থানের কারণেই গত বছর তিনি জাতীয় শোক দিবসের প্রথম প্রহরে জন্মদিনের কেক না কাটার সিদ্ধান্ত নেন। এ বছরও এর ব্যত্যয় হবে না বলে মনে করেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর বিবেচনায় তারা মুখ খুলতে নারাজ।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সামনে কেক না কাটলেও বিএনপির সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলো, বিশেষ করে ছাত্রদল প্রথম প্রহরে নিজেদের উদ্যোগে কেক কাটতে পারে। এ বছর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেক কাটার সম্ভাবনা আছে ছাত্র সংগঠনটির। এছাড়া, বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও ব্যক্তি উদ্যোগে কেক কাটতে পারে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আয়োজন হলে দেখতে পাবেন। এ বিষয়টি অজ্ঞাত।’ ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘জন্মদিন পালন করা হয় তো নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে। অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ম্যাডামকে ভালোবেসে এটি করে থাকেন। আর ম্যাডাম বর্তমানে লন্ডনে আছেন। ফলে, পুরো বিষয়টিই লন্ডন বিএনপির উপর নির্ভর করছে। আর জন্মদিন পালন করার বিষয়ে ধারাবাহিক কোনও কর্মসূচি নেই।’

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে জন্মদিন পালন করার এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।নেতা-কর্মীরা কেউ কেউ হয়তো করতে পারে।’ অফিসিয়াল কোনও নির্দেশনা এখনও পাননি জানিয়ে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘এটা তো দুয়েক ঘণ্টার নোটিশেই হয়। বেশি সময় লাগে না। তবে এখন পর্যন্ত অফিসিয়াল কোনও নোটিশ পাইনি।’

ছাত্রদলের সহসভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, ‘যতদূর জানি, আনুষ্ঠানিকভাবে জন্মদিন পালন করার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। নেতা-কর্মীরা কেক কাটলেও তা ব্যক্তি উদ্যোগে হতে পারে।’

এসটিএস/এএম