প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হাস্যকর: রিজভী

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন রুহুল কবির রিজভীবিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব  রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু  দেশবাসীর কাছেই নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও একটি হাস্যকর ও ধাপ্পাবাজিমূলক বক্তব্য বলে গণ্য হয়েছে। 

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যা‌লয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন,  ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘জাতির পিতার হত্যার পর নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন, তারাই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেন। দিনের পর দিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক ধারা আবার ফিরিয়ে এনেছি। আজকে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। মানুষ ভোট দিতে পারছে। এটা আমাদের অবদান। মানুষ পছন্দমতো লোককেই নির্বাচন করবে। আমরা সেটাই চাই। নির্বাচন প্রক্রিয়া আমরাই উন্নতি করেছি।’ তার এহেন বক্তব্যে দেশবাসী বিস্ময়ে বাক্যহারা।’’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত তাদের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে, সবগুলোই ছিল নিখুঁত সরকারি সন্ত্রাসনির্ভর। জোর করে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জালভোট প্রদানসহ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনমূলক নির্বাচনে পারদর্শী আওয়ামী লীগ। বারবার বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে করা হয়েছে সরকারের রাবারস্ট্যাম্প।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিথ্যাচার করে জনগণকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না। হাসিনা মার্কা নির্বাচনের আরেকটি জলন্ত উদাহরণ গতকালই (২৪ সেপ্টেম্বর) প্রমাণিত হয়েছে।  চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলাধীন নবগঠিত কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার খারেরা ইউনিয়ন এবং রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ও রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য ও বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ভোটারদের মধ্যে চরম ভীতির সৃষ্টি করে। সকাল থেকেই তিন জেলার নির্বাচনী এলাকাগুলোর সব ভোটকেন্দ্র পেশীশক্তির জোরে দখলে নিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। প্রতিপক্ষের এজেন্টদের মারধর করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করলেও তারা এধরনের দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, সম্পূর্ণভাবে নীরব ও নির্বিকার থেকেছে।’

আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে  উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘পুনরায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিএনপি’র পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এধরনের উদ্যোগ থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

রাজধানীর বাসিন্দাদের বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, এমনটা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রাজধানীবাসীর বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক। এর ফলে ঘরভাড়া বৃদ্ধিসহ মানুষের জীবনযাপনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সৃষ্টি হবে চরম বিশৃঙ্খলা। একই সঙ্গে আমরা রেলের ভাড়া,রেশনের চাল ও গমের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবেরও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার গণবিরোধী ও ভোটারবিহীন সরকার বলেই জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ওপরই করারোপ করছে। লুটপাটকে আরও তীব্র মাত্রায় অব্যাহত রাখার জন্য মাত্রাতিরিক্ত কর বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সরকার লোক দেখানো ঢাউস বাজেট দিয়ে, এখন বাজেটের বিশাল ঘাটতি মেটাতে জনগণের ঘাড় মটকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমি রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি, রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এটি প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি।’ 

আরও পড়ুন: 

বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুরা মিয়ানমারের নাগরিক: মায়া