দুই বছরের ব্যবধানে চার বার হামলার শিকার হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। ২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনি প্রচারণার সময় রাজধানীতে পৃথক দিনে তিন বার তার গাড়িবহরে হামলা হয়। আর শনিবার চতুর্থ হামলা হয়ে গেল ফেনীতে। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, সরকার দলীয় লোকজনই এসব হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সরকারের গণভিত্তি নেই বলে খালেদা জিয়ার যেকোনও কার্যক্রমে চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হয় বলেও দাবি করেন দলটির সিনিয়র কয়েকজন নেতা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার পেছনে সরকারকেই দায়ী করেন। শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সামনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এসব হামলা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।’ ‘সরকারকে এই অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে এবং এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত’- বলেও দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব।
বিএনপির অভিযোগ, ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাই খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা থেকে বাদ যায়নি তার ত্রাণ কার্যক্রম কভার করতে যাওয়া গণমাধ্যমের যানবাহনগুলোও। আহত হয়েছে কয়েকজন সাংবাদিক।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ২০১৫ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে গিয়েও হামলার শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া। ওই সময় তার গাড়িবহরে হামলা হয় রাজধানীর কাওরান বাজার, বাংলা মোটর ও ফকিরাপুলে। ওইসব হামলায়ও সরকার দলীয়রা সম্পৃক্ত বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
চট্টগ্রামের প্রভাবশালী এই বিএনপি নেতার দাবি, সরকার নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছে।
শনিবার খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার সঙ্গে শিকার হয়েছে গণমাধ্যমের কয়েকটি গাড়ি। এসময় কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। ভাঙচুর করা হয় একাধিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাও। বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘এই হামলায় নিন্দা প্রকাশ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।’
বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, সরকার ক্রমাগত নিজেদের জনপ্রিয়তা হারিয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। এ কারণে ত্রাণ দিতে যাওয়া গাড়িবহরও মুক্তি পায়নি সরকার সমর্থকদের রোষানল থেকে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের গণভিত্তি নাই। সেটা তারা আগে অনুভব করেনি। কিছুদিন ধরে করতে পারছে। তারা চায়, দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থার সৃষ্টি না হোক। এ কারণে সরকার সন্ত্রাসবাদ ব্যবহার করছে। জনগণকে রাজনীতি বিচ্যুত করতে চায়। কিন্তু জনগণ তো ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে চায়। জনগণকে বীতশ্রদ্ধ করতেই তারা ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠা করেছে।’
আবদুল্লাহ আল নোমান দাবি করেছেন, শনিবারের হামলায় সাংবাদিকসহ প্রায় ১৫-২০ আহত হয়েছেন।
শনিবারের ঘটনার পেছনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রতি আঙুল তোলেন শামসুজ্জামান দুদু। তার ভাষ্য, কিছুদিন আগেই তিনি ফেনীতে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নিয়ে বৈঠক করেছেন। তার ওই বৈঠক আজকের হামলার পরিকল্পনা কিনা কে জানে?
এদিকে, শনিবার খালেদা জিয়ার কক্সবাজার যাত্রাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায়। ঢাকা থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দী পর্যন্ত পথে-পথে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বিনাবাধায় শৃঙ্খলিত করে রেখেছেন তারা।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর পথে-পথে উৎসুক কর্মী সমর্থকদের মধ্যে আটকা পড়লেও শান্তিপূর্ণভাবে নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার কাজটি করেছেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। একইসঙ্গে সড়কপথে যানজট দূর করতেও তাদের দেখা গেছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে।
তবে এই উদ্যোগ খানিকটা ভাটা পড়ে ফেনী জেলায় এসে। জেলার ফতেহপুর রেল ক্রসিংয়ে গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর হয় সাংবাদিকদের পরিবহনগুলো। ফেনী থেকে চট্টগ্রামের মীরসরাই পর্যন্ত লোকজনের রহস্যজনক আনাগোনা দেখা গেলেও কোথাও পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েনি এ প্রতিবেদকের।
যদিও শনিবার সকালে ঢাকা থেকে রওনার সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা পুলিশ নিশ্চিত করবে বলে পুলিশপ্রধান বলেছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘পুলিশ শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত থাকলেও কিছু স্থানে নীরব ভূমিকায় ছিল। এ কারণেই আওয়ামী লীগের লোকজন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করার সুযোগ পেয়েছে।’
আরও পড়ুন:
খালেদার গাড়িবহরে হামলা: ৩ গাড়িসহ টিভি ক্যামেরা ভাঙচুর, আহত ২ৎ