‘রোহিঙ্গা’ জাতীয় সমস্যা, একসঙ্গে বসে সমাধান খুঁজতে হবে

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন খালেদা জিয়াবাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা এখন জাতীয় সমস্যা বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘সবাইকে এক সঙ্গে বসেই এ সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।’

রবিবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শেষ দিকে এসব কথা বলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ৭ নভেম্বর দিনটিকে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সমাবেশটি আয়োজন করে বিএনপি। বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এক ঘণ্টার বক্তব্যে খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি রবিবারের জনসভায় সরকার বিভিন্ন উপায়ে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা দেশের জন্য একটা বড় সমস্যা। এই রোহিঙ্গারা শুধু অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের সমস্যা নয়, এটা জাতীয় সমস্যা। তাই একসঙ্গে বসে এর সমাধান বের করতে হবে।’

খালেদা জিয়া এসময় রোহিঙ্গাদের দ্রুত দেশে ফেরত নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান। গত ৩০ অক্টোবর কক্সবাজার উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা দিতে গিয়েও এ দাবি জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা যেন নিরাপদে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পেয়ে সেখানে বসবাস করতে পারে, সেজন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে সোচ্ছার হওয়া উচিত।’

এসময় তিনি রাশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ, ভারত ও চীনকে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা না হলে রোহিঙ্গাদের ওপর ধারাবাহিকবাবে মিয়ানমার সরকার নিপীড়ন করবে।’

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আশ্বাস দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের হয়তো বলে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা হবে। কিন্তু আমি বলতে চাই, বিএনপি হিংসাত্মক রাজনীতি করে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দক্ষতা-যোগ্যতা দেখব। বিএনপি বা আওয়ামী লীগ বলে কিছু নেই। দক্ষতা-যোগ্যতা দেখা হবে। বিএনপি লোক হত্যার রাজনীতি করে না। লোক হত্যার রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ।’

লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার ‘‘খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন না’ এমন বক্তব্য উদ্ধৃত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি বিদেশে থাকার সময় তারা (আওয়ামী লীগ) অপপ্রচার চালিয়েছে, আমি নাকি ফিরব না। আমার ঠিকানা বাংলাদেশ। এ দেশ ছেড়ে আমি কোথায় যাব?’

নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনাদের বলতে চাই, এদেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার দায়িত্ব আপনাদের। সেজন্য নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলবেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে, ইভিএম বন্ধ করতে হবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করে তাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিতে হবে।  তাহলেই এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীও থাকবে। পুলিশ বাহিনী নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু শেখ হাসিনার গুন্ডা বাহিনী পুরো কেন্দ্র দখল করে মানুষের উপর অত্যাচার করবে, এ কারণে সেনা মোতায়েন করতে হবে।’

ব্ক্তব্যের শেষ দিকে বিএনপির গ্রেফতার হওয়া সিনিয়র কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে তাদের অবিলম্বে মুক্তি চেয়ে বক্তব্য শেষ করেন খালেদা জিয়া। এরপর সমাবেশের সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনসভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

জনসভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানী, সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম। জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, মো. শাজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, শওকত মাহমুদ, আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশিদ, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মুন্সী বজলুল বাছিত আনজুসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শফিউল বারী বাবু, সুলতানা আহমেদ, আনোয়ার হোসাইন ও ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান।

আরও পড়ুন:
আপনাদের শুদ্ধ করবো, আ.লীগকে খালেদা জিয়া