খালেদা জিয়ার কাছে ন্যায়বিচারের কথা শুনতে কষ্ট হয়: নাসিম

বক্তব্য রাখছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, খালেদা জিয়া অনেক কথাই বলেন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচার চাই।’ এটা শুনতে কষ্ট হয়।

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) ও তৃণমূল বিএনপি’র তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করেছিলাম, তখন বাংলাদেশ অন্ধকারের মধ্যে ছিল। আর আজকে আলোকিত বাংলাদেশ।’

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কাজ দেখলাম। সুন্দর কাজ হচ্ছে, রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে। এখন এই সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে। যে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করার জন্য এই খালেদা জিয়া চক্রান্ত করে  এবং একজন নোবেল বিজয়ীকে দিয়ে অর্থ বন্ধ করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সাহস করে নিজের অর্থায়নে কাজ শুরু করেছেন।’

তিনি আরও  বলেন, ‘দেশে সহিংস আন্দোলন করার কারও সাহস নেই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এসেছে। হরতাল হয় না। ভাঙচুর করে লাভ নেই। হরতাল করে লাভ নেই। জনগণ পাঁচ বছর পর পর রায় দেবে। কারণ, হরতাল করে সরকার পরিবর্তন করা যাবে না। এ সিস্টেম এনেছেন শেখ হাসিনা।’

নাসিম প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘দুনিয়ার কোনও দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া উন্নয়ন হয়েছে? মালয়েশিয়া,ভারত সিঙ্গাপুর,জাপান,কোরিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে এটা ছিল না। এখন শেখ হাসিনা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এনেছেন। নয় বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন বলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।একটি সরকার বার বার ক্ষমতায় থাকলে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। এটা বুঝেই আজ  আমরা-আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। কোনও এমপি, মন্ত্রী বানানোর নির্বাচন নয়, এটা মনে রাখবেন। এ নির্বাচন হলো দেশ এগিয়ে যাবে নাকি পিছিয়ে যাবে, আলোকিত থাকবে নাকি অন্ধকারে থাকবে, জঙ্গি থাকবে কি থাকবে না, সেই নির্বাচন।এ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের শক্তি, শেখ হাসিনা, আমি, আপনি পরাজিত হতে পারি না। ওরা ক্ষমতায় আসলে আবারও জঙ্গিবাদের উত্থান হবে। হাওয়া ভবনের সৃষ্টি হবে। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে। যেটা খালেদার জিয়ার সময় হয়েছিল।’

খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া অনেক কথা বলেন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচার চাই।’ এটা শুনতে কষ্ট হয়। কোথায় ন্যায়বিচার ছিল, যখন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন আপনার স্বামী জিয়াউর রহমান। কোথায় ছিল ন্যায়বিচারের কথা। একুশে আগস্টের খুনিদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। বিচারতো দূরে থাক, তদন্তও করেননি। তখন কোথায় ন্যায়বিচার ছিল। এখন ন্যায়বিচারের কথা বলেন। কেন বলেন। আপনি এবং আপনার স্বামী ন্যায়বিচার দেন নাই। এরশাদও ন্যায়বিচার দেন নাই। ন্যায়বিচার চাওয়ার অধিকার আপনার নাই।’’

এসময় নাজমুল হুদাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, পেছনে ফেরার কোনও সুযোগ আমাদের নাই। আপনারা ছেড়ে এসেছেন। আমাদের সঙ্গে এসেছেন। তাই পেছনে ফেরার কোনও সুযোগ নেই। আপনাকে আগেও বলেছি, এখনও বলছি, কিভাবে নির্বাচন করবো। আমরা ১০ জন নিয়ে বসবো। আলোচনা করে দেখবো।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগে বিএনএ-এর প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, ‘বস্তাপচা রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য আমরা ৩১টি দল সংঘবদ্ধ হয়েছি। এটি একটি নির্বাচনমুখী জোট। আমরা সব ক'টি আসনে প্রার্থী দিলেও যেখানে নিশ্চিতভাবে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী থাকবে, সেসব আসন থেকে আমাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবো। ঠিক একইভাবে আমরা দাবি করবো, যেখানে আওয়ামী লীগের কোনও প্রার্থী নেই, কিংবা ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী নেই, সেখানে বিএনএ’র প্রার্থীর যোগ্যতা বিবেচনা করে, নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রার্থী দিতে হবে। আজকে আমি প্রধান অতিথির কাছে এই অনুরোধটি করবো।’

আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করে নাজমুল হুদা বলেন, ‘প্রধান অতিথিকে অনুরোধ করবো, আপনি দয়া করে বাংলাদেশ জাতীয় জোটের ১০ জন শীর্ষ নেতাকে  আহ্বান করেন, আপনাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার জন্য। যাতে করে আমরা প্রতিটি আসনের একটি নির্ভুল সমীকরণের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে পারি।’

নাজমুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি উন্নয়ন খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমান, বিএনএ'র কো-চেয়ারম্যান এম. নাজিম উদ্দীন আল-আজাদ, মহাসচিব মেজর (অব.) ডা. এম. হাবিবুর রহমান, মুখপাত্র শেখ শহিদুজ্জামান ও অভিনেতা আহমেদ শরীফ প্রমুখ।

আরও পড়ুন: ঢাকা উত্তরে আ. লীগের প্রার্থী ঘোষণা মঙ্গলবার