‘জেল থেকেই চলবে বিএনপি’

কারাগারে নেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকেবিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পাঁচ বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে জেলে গেলেও দল পরিচালনায় কোনও সমস্যা হবে না। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান দায়িত্ব পাবেন চেয়ারম্যানের। তাছাড়াও দলটির নেতারা বলছেন, ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামি হওয়ার কারণে খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগে কোনও সমস্যা হবে না। যেভাবে কোনও সমস্যা হয়নি এক-এগারোর সময়েও। ফলে জেলে থাকলেও চেয়ারপারসনের সঙ্গে পরামর্শ করেই দল পরিচালনার সুযোগ থাকছে বিএনপির সামনে।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্রে দল পরিচালনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। সেই অনুযায়ী দল চলবে।’ মহাসচিব গঠনতন্ত্রের ওপর জোর দেওয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে। সবশেষ গত বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠকেও এ বিষয়টি আলোচনায় ছিল।

সূত্রের দাবি, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে লন্ডনে থাকা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতিসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবেন দলের মহাসচিব। পাশাপাশি বুধবার থেকে নেতারা কে কোথায় অবস্থান নেবেন, কীভাবে আদালতে যাবেন, এ নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৮ ধারার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান উপধারায় বলা আছে, চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ায় দল পরিচালনায় কোনও সমস্যা হবে না। বিএনপি জেলখানা থেকে পরিচালিত হবে। শেখ মুজিব যখন জেলে ছিলেন, আওয়ামী লীগ তখন জেল থেকে পরিচালিত হয়েছে।’

এটা কীভাবে হবে জানতে চাইলে শামসুজ্জামান দুদুর ব্যাখ্যা, ‘এটা খুব সহজ। খালেদা জিয়াকে যারা পাহারা দিয়ে রাখবে, তার ৮০ শতাংশ খালেদা জিয়ার লোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেল থেকে চিঠি আসে, চিঠিতে আন্দোলন গড়ে ওঠে–কীভাবে হয়েছে, জেল থেকেই হয়েছে।’

বর্তমান মন্ত্রিসভার ৮০-৯০ শতাংশই খালেদা জিয়ার লোক বলেও দাবি করেন তিনি। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এরা জানে, সরকারের পতন হলে বেগম জিয়াই তাদের রক্ষা করতে পারবেন। স্বাভাবিকভাবে শেখ হাসিনার লোক হলেও তারা খালেদা জিয়ার আশ্রয়প্রার্থী হতে চাইবে।’

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এই সাজা দেওয়া হলো, আমরা ধৈর্য ধারণ করেছি। আওয়ামী লীগ হলে এক মাসের হরতাল দিতো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘দল পরিচালনায় কোনও সমস্যা নেই। বেশি কিছু চাচ্ছি না; মানুষের ভোটের অধিকার, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। এই পরিচালনার জন্য বিশেষ কিছু দরকার নেই।’

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মূলত স্থায়ী কমিটি ও তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেই বিএনপির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে। পাশাপাশি জেলে থাকা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলার সুযোগ তো রয়েছেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কালেক্টিভ সিদ্ধান্তে দল চলবে।’

দলটির একাধিক সূত্র বলছে, যেহেতু তারেক রহমান বিদেশে আছেন এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তারও সাজা হয়েছে, সেক্ষেত্রে তাকে সরাসরি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদ দিয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলে জটিলতা তৈরি করা হবে না। আর এর বাইরে খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ায় খুব স্বাভাবিকভাবে তারেক রহমানই দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে অংশ নেবেন।

তবে এ বিষয়টি নিয়ে কোনও নেতাই মুখ খুলতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন: 

পুলিশবেষ্টিত ফিরোজা, ফাঁকা গুলশান কার্যালয়

খালেদা জিয়ার সাজা: বিদেশিদের জন্য বক্তব্য ঠিক করেছে সরকার