সাইনবোর্ডহীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কার্যালয়, বসে সহযোগী সংগঠনও

সরেজমিনে রাজনৈতিক কার্যালয়: পর্ব ৬সাততলা যে ভবনে কার্যালয়, সেখানে বাইরে কোনও সাইনবোর্ডই নেই বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামে। লোকজনকে জিজ্ঞেস করে কার্যালয়ের খোঁজ পাওয়া যায় ভবনের পাঁচতলায়। সেখানে ভাড়া নেওয়া তিন কামরার একটি ফ্ল্যাট দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বাইরে তাদের একটি সহযোগী সংগঠনও (ছাত্র মজলিস) কার্যালয়টি ব্যবহার করে। রাজধানীর পুরানা পল্টনে এই অবস্থায়ই চলছে রাজনৈতিক দলটি।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সাইনবোর্ড না থাকার বিষয়ে দলটির অফিস ও বায়তুলমাল সম্পাদক মওলানা আজিজুর রহমান হেলাল বলেন, ‘আগে দলের সাইনবোর্ড ছিল। নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে সেটি ফেলে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আবার লাগানো হবে।’বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের কার্যালয়

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রয়েছে কয়েকটি টেবিল, ফাইল কেবিনেট, একটি বইয়ের তাক, বেশ কিছু চেয়ার, দলের বিভিন্ন পোস্টার ও বই। জানা গেছে, দলের আমির ও মহাসচিব নিয়মিত কার্যালয়ে আসেন না। আর রাজনৈতিক কোনও কর্মকাণ্ড থাকলে তখনই কেবল নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটে। তবে দলের অফিস ও বায়তুলমাল সম্পাদক নিয়মিত অফিস করেন। 

দলের আমির প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবীবুর রহমান সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন সিলেটে থাকেন। স্থানীয় কাজীরবাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল তিনি। আর দলের মহাসিচব মাওলানা মাহফুজুল হক ঢাকার মোহাম্মদপুর জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল।

মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘প্রয়োজন হলে অফিসে যাই। এর বাইরে দলের অফিস ও বায়তুলমাল সম্পাদক নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। সব নেতাদের সমন্বয়ে দলের কার্যক্রম চলছে।’বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের কার্যালয়

নির্বাচন কমিশনে ৩৩ নম্বর নিবন্ধিত রাজনৈতি দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এরপর কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়ে দলটি। সর্বশেষ ২০০৫ সালে পদ-পদবীর দ্বন্দ্বে ভাঙে। এখন ‘বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস’ ও ‘খেলাফত মজলিস’ নামে দুটি দল রয়েছে। প্রায় একই নামের দল দু’টির নির্বাচনি প্রতীক যথাক্রমে ‘রিকশা’ ও ‘দেয়ালঘড়ি’। দলের ভাঙনের বিষয়ে মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘আর্দশিক ও দলের অভ্যন্তরীণ কারণে ২০০৫ সালে ভেঙে যায়। এখানে পদ-পদবীর চেয়ে আদর্শিক কারণটাই বড় ছিল।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদে কোনও নারী সদস্য নেই। যদিও নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী থাকতে হবে। এ বিষয়ে মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বলেন, ‘দলের নারীনেত্রী রাখার বিষয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। আশা করি আগামী দুই বছরের মধ্যে দলে ৩৩ শতাংশ নারী নেত্রী থাকবে।’ বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের যুব মজলিস ও ছাত্র মজলিস নামে দুটি সহযোগী সংগঠন রয়েছে বলেও জানা গেছে।বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের কার্যালয়

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারা দাবি করেন, সারাদেশে ৩১টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ ও আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে তাদের। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার সদর ও উপজেলায়ও রয়েছে কমিটি। সিলেট বিভাগ, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী বলে দাবি করেন তারা।

রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সিলেট, সিলেট মহানগর, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লাসহ সাত জেলায় দলটির কার্যালয় রয়েছে। বাংলাদেশের বাইরে সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, কাতারে দলটির কার্যক্রম রয়েছে বলে নেতারা জানান।

দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বলেন, ‘সাত থেকে আট জেলায় আমাদের দলের কার্যালয় রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের আরপিও’র জন্য ২০টি জেলায় কার্যালয় নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৩৯টি জেলায় কমিটি আছে।’

হবিগঞ্জ জেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ ওকিলপুরী বলেন, ‘হবিগঞ্জে আমাদের ২৩ সদস্যের কমিটি রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা কমিটি রয়েছে।’

বর্তমান সংসদে দলটির কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। দলীয় নেতারা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে দলের আমির আল্লামা হাবীবুর রহমান, ঢাকা-৭ দলের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, কিশোরগঞ্জ-৬ থেকে যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের কার্যালয়

এ প্রসঙ্গে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘নির্বাচন করার চিন্তা রয়েছে। তবে সবকিছু কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত হবে।’ আর আতাউল্লাহ আমীন বলেন, ‘বেশকিছু আসন থেকে আমাদের দলের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে কোনও জোটের সঙ্গে নির্বাচন করলে সে ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে ছয় থেকে সাতটি আসনে আমাদের দলের প্রার্থী দেওয়া হবে।’

জানা গেছে, দলটির অর্থের মূল উৎস হচ্ছে বায়তুলমাল সংগ্রহ করা। সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মী সবার কাছ থেকে বায়তুলমাল সংগ্রহ করা হয়।

জানতে চাইলে অফিস ও বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল বলেন, ‘নিয়মিত সদস্যদের থেকে চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। এর বাইরে বড় কোনও অনুষ্ঠান থাকলে গণচাঁদা তোলা হয়।’

দলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের দলের অবস্থা ভালো। আগামী নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হলে বেশকিছু আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে।’

জানা গেছে, জোটভুক্ত হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে দলটি। যে জোটে তাদের দাবি-দাওয়া বেশি প্রাধান্য পাবে, তাদের সঙ্গে জোটভুক্ত হবে তারা। দলটির যুগ্ম মহাসচিব মওলানা আতাউল্লাহ আমীন জানান, জোটভুক্ত হওয়ার প্রশ্নে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাত থেকে আটটি আসন পাওয়াই বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রধান শর্ত। তিনি বলেন, ‘দুই থেকে তিন মাস আগে বিএনপি যোগাযোগ করেছে। আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৫ দিন আগে যোগাযোগ হয়েছে। তবে এখনও জোটে যাওয়ার বিষয়ে দুই দল থেকে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। আমাদের দাবি-দাওয়া যে দল বেশি প্রাধান্য দেবে, তাদের সঙ্গে জোটভুক্ত হবো।’ তিনি জানান, ২০০৬ সালে পাঁচটি দাবির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনি সমঝোতা হয়েছিল। যদিও পরে একসঙ্গে নির্বাচন করা হয়নি।

তবে সম্ভাব্য জোটভুক্তির প্রসঙ্গে মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘ইসলামি দলগুলো নিয়ে একটা জোট গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির জোটে যাওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি।’