বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চায় বিএনপি

৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে খালেদা জিয়াকারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষা করে তার সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব নয়। বরং এমআরআইসহ  উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। এজন্য প্রথমে তার সঙ্গে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দেখা করা ও তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে।

দলটির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া আগে থেকেই অসুস্থ। তার দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, চোখের অপারেশনও হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা বলছেন, তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ। সম্প্রতি করা এক্স-রে রিপোর্টগুলোতে তার ঘাড়ে ও কোমরের হাড়ে সমস্যা ধরা পড়েছে। দলটির নেতাদের অভিযোগ, এরপরও এখন পর্যন্ত তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।

পহেলা বৈশাখে কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই মেয়ে। অবশ্য বেরিয়ে এসে তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ বা তার অসুস্থতার বিষয়ে মিডিয়ার সামনে কিছু বলেননি। 

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাবের মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করেছেন। তারা জানিয়েছেন তিনি গুরুতর অসুস্থ। এক্স-রে রিপোর্টগুলোতে বলা হচ্ছে, তার ঘাড়ে ও কোমরের হাড়ে সমস্যা আছে। তাই আমরা ইউনাইটেড হাসপাতাল বা বিশেষায়িত কোনও হাসপাতালে তার চিকিৎসা করার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। কারণ, তিনি এখন সরকারের জিম্মায় আছেন। তাই তার চিকিৎসা করানোর দায়িত্বও সরকারের।’   

খালেদা জিয়ার এমআরআইসহ  উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব নয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তার জীবনযাপনের একটি নিয়ম ছিল। কিন্তু কারাগারে সেই নিয়ম তিনি পালন করতে পারছেন না। সবকিছু সব জায়গায় করা যায় না।’ 

গত ৬ এপ্রিল কারা কর্তৃপক্ষের অনুরোধে গঠিত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়। সেখানে তার এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এরপর ৮ এপ্রিল মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ঢামেকের অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘তার বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার দরকার নেই। খালেদা জিয়ার শরীরে এমন কোনও রোগ নেই, যা এদেশে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তার রিউমেটাল আর্থ্রাইটিস ও অস্টোআর্থ্রাইটিস রয়েছে। যদিও তার হাঁটু প্রতিস্থাপন করা আছে। এ নিয়ে তার কোনও অভিযোগ নেই বলে তিনি আমাদের জানিয়েছেন। আমরা চারজন যে চিকিৎসা দিয়ে এসেছি, তাতে তার উন্নতি হবে।’

সোমবার (৯ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের নেতা অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বয়সজনিত নানা রোগে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যেকোনও সময় আঘাতজনিত পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। রোগব্যাধিতে আক্রান্ত একজন বয়স্ক নারীর এই নির্জন মানবেতর কারাবাস স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে, তা সাধারণ মানুষকেও গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রহসনের চিকিৎসার অংশ হিসেবে সরকারি মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষা করিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল তাকে প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করে। এ কারণে হাইকোর্ট জামিন দিলেও সরকারের ইশারায় তা বাতিল করা হয়। তাকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখাই এর উদ্দেশ্য। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। আবেদন করার পরও তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করে। এজন্য একটি মিথ্যা মামলায় প্রথমে তাকে সাজা দিয়েছে। যখন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার জামিন করানো হলো, সেই জামিন বাতিল করানো হলো। দুদকের আরও কত মামলা, তার কোনও খোঁজ নেই। কিন্তু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটছে।’

সরকার লোক দেখানোর জন্য খালেদা জিয়ার এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষা করিয়েছে বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘যদি লোক দেখানো না হতো, তাহলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসদের দেখা করতে দিতো এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করানো হতো। কিন্তু সরকার তা করছে না। আসলে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এবং জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে চক্রান্ত করা হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীরা মারাও গেছে।’   

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘আগামী নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে সরকার দূরে রেখে একতরফা নির্বাচন করে আবার তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। এজন্য প্রথমে মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রীকে (খালেদা জিয়া) কারাবন্দি করেছে। এখন তিনি অসুস্থ হলেও তার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।’ 

বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. ফাইয়াজ শুভ বলেন, ‘আজ সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। আমরা শুরু থেকেই তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ কারণে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে তার সাক্ষাতের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু সরকার দেখা করতে দেয়নি। আমরা তার উন্নত ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ বলে আমরা জানতে পেরেছি। যদি তার উন্নত চিকিৎসা না করা হয়, তার যদি কোনও কিছু হয়, এর দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। দেশের জনগণের কাছে এর জবাব দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১/১১ সরকারের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাহলে এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতে পারবেন না বা তারা তার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না?’