খুলনায় রিটার্নিং অফিসারের প্রতি অনাস্থা আ. লীগের

সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখছেন এইচটি ইমামখুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যায়িত করে তার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে শেষ সময়ে এসে নির্বাচন বিঘ্নিত হবে মনে করে তার প্রত্যাহার চায় না ক্ষমতাসীন দল। আওয়ামী লীগের দাবি, রিটার্নিং কর্মকর্তা যেন আইন ও সংবিধানসম্মতভাবে নিরপেক্ষ আচরণ করেন।  

বুধবার (৯ এপ্রিল) বিকালে আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচটি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবি করেন।

বৈঠক শেষে এইচটি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘খুলনা নির্বাচনে যিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা, তিনি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন। নির্বাচনের জন্য যেসব প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আমরা এসব বিষয়ে সিইসিকে জানিয়েছি। রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতি আমরা অনাস্থা জানিয়েছি। ’

রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রত্যাহার চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের যেহেতু আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, সেজন্য প্রত্যাহার বা বদলি করা হলে নির্বাচন বিঘ্নিত হবে। এজন্য আমরা তাকে প্রতাহারের দাবি জানাচ্ছি না। তবে তিনি যেন সংবিধানসম্মতভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন। ’

রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘তিনি অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট এবং তার অতীত কালিমালিপ্ত। তিনি বিশেষ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার কথাবার্তা সংবিধানবিরোধী। ’

এ ব্যাপারে কমিশন কোনও আশ্বাস দিয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে এইচটি ইমাম বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের জানিয়েছেন, রিটার্নিং অফিসারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য ঢাকা থেকে একজন অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি পুরো নির্বাচনি কার্যক্রম সামগ্রিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন ।’

এইচ টি ইমাম আরও বলেন, ‘খুলনায় লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই। আমাদের দলের সিনিয়র নেতাদের অনেকেই সংসদ সদস্য। কিন্তু আচরণবিধির কারণে তারা নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। কিন্তু অন্যদলের সব নেতারা একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এতে লেভেল প্লেইং ফিল্ড বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এ কারণে আমরা পরবর্তী স্থায়ী সরকার নির্বাচনে প্রয়োজনে সংশোধনী আনার কথা বলেছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি প্রচারণা চালাচ্ছে। এতে ভোটাররা শঙ্কিত ও আতঙ্কগ্রস্ত। এ বিষয়ে আমরা  কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

খুলনার বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তাদের নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনও ব্যাপারে গ্রেফতার করা হয়নি। তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। এ কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ’

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ তুলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রথম এ ধরনের একটি নির্বাচন পরিচালনা করছেন। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, তার সত্যতা আমরা পাইনি। তবে তার পক্ষে-বিপক্ষে কথা ওঠার কারণে তিনি যেন সাহস নিয়ে  ও সুন্দরভাবে কাজ করতে পারেন, সেজন্য আমরা একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছি। ’

গাজীপুর জেলার নির্বাচনে পুলিশ সুপারের প্রত্যাহারের দাবি তুলেছিল বিএনপি। কিন্তু সেখানে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ খুলনার রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেওয়ার পর সেখানে আরেকজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।  এটা কতটা যৌক্তিক, এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘কোনও অভিযোগ এলে সেটা খতিয়ে দেখা হয়। খুলনার রিটার্নিং অফিসার সম্পর্কে তারা আগেও অভিযোগ দিয়েছিল, আজকে আবার দিয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে কিছু দুর্বলতা পেয়েছি। তিনি যেন সুন্দরভাবে কাজ করতে পারেন, সে জন্য সিনিয়র কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছি।'