গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে না আ.লীগ, ভাবছে বিএনপি

 

 

গাজীপুর সিটি নির্বাচন ও বিএনপি

ঈদের পর আগামী ১৮ জুন থেকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা নামবে বিএনপি। এ জন্য গাজীপুর সিটির ৫৭ টি ওয়ার্ডে প্রচারণা উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ৫৭ টি টিমও গঠন করেছে দলটি। একইসঙ্গে ১৯ অথবা ২০ জুন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগও তুলে ধরবে বিএনপির প্রতিনিধি দল।

বুধবার (১৩ জুন) বেলা ২ টা থেকে প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এবং গাজীপুর সিটির স্থানীয় নেতারা বৈঠকে বসে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আগামী ১৮ জুন থেকে আমরা আবারও নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করবো। প্রচারণায় স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা সমন্বয় করে কাজ করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আশা করি দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত।  

বৈঠকে থাকা একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিএনপি মনে করে খুলনা সিটি নির্বাচনের মতো গাজীপুর সিটিতে হস্তক্ষেপ করবে না আওয়ামী লীগ। কারণ, খুলনা সিটিতে প্রার্থী হতে রাজি ছিল না সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে তাকে পছন্দ করার কারণে সংসদ থেকে পদত্যাগ করিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী করিয়েছেন। তাই তাকে জয়ী করিয়ে আনা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের দায়িত্ব ছিল। এ কারণে প্রশাসন দিয়ে বিএনপিকে চাপে রেখে খুলনা সিটিতে দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, গাজীপুর সিটির মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বিভক্ত। আবার প্রার্থী হিসেবেও গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলমের তেমন কোনও জনপ্রিয়তা নেই। তাই গাজীপুরে বিএনপি স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা মনোবল নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারলে দলীয় প্রার্থী জয়ী হয়ে আসবে।        

তিনি আরও বলেন, আমরা গাজীপুরের স্থানীয় নেতাদের ডেকে বলে দিয়েছি নিজেদের মধ্যে কোনও বিভেদ বা দ্বন্দ্ব থাকলে তা মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মেয়র প্রার্থী পক্ষে কাজ করতে। আশা করি গাজীপুরে হাসান সরকার পরিবারের যে ভোট ব্যাংক রয়েছে আর প্রশাসন যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করে তাহলে আমাদের জয় নিশ্চিত। 

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে,আগামী ১৯ অথবা ২০ জুন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করবে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে লিখিতভাবে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ হারুন অর রশীদকে নির্বাচনের আগে প্রত্যাহার, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়নের দাবি, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করা, স্থানীয় প্রশাসন যেন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে তার দাবিসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে ইসিকে আহ্বান জানাবে বিএনপি। 

আরেক ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আমাদের যেসব অভিযোগ বা আপত্তি রয়েছে সেগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করবো। তবে কবে দেখা করবো তা ঠিক করা হয়নি।   

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও গাজীপুরের স্থানীয় নেতারা।

প্রসঙ্গত পূর্ব ঘোষিত ভোটের তারিখ অনুযায়ী ১৩ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ৬ মে সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্ট। এরপর আবার আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ধার্য করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।