‘সাজানো নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করার জন্য নিবন্ধন আইন’

গণসংহতি আন্দোলনের গোলটেবিল বৈঠকসাজানো নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করতে অথবা নিবন্ধনহীন দলে পরিণত করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে নিবন্ধন প্রক্রিয়া আইন বলে অভিযোগ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। বুধবার (২৭ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া,নির্বাচন ও সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ অভিযোগ করেন।  

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া আইনে আছে যে, পরপর দুই বার নির্বাচনে অংশ না নিলে  দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। এটা করা হয়েছে দলগুলোকে যে কোনও সাজানো নির্বাচনেও অংশ নিতে বাধ্য করতে অথবা নিবন্ধনহীন দলে পরিণত করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। আমরা শুধুমাত্র কোনও একটি দল নিবন্ধন পেলো বা পেলো না,তার মধ্যেই আলাপটাকে সীমিত রাখতে চাই না। আমরা বরং চাচ্ছি, এসব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কিভাবে জনগণকে ক্ষমতাহীন করা হচ্ছে,সরকারকে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে,সেটা তুলে ধরতে।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আইন যে কারণে করা হয়েছে, বর্তমানে তার বিপরীতে এই আইনকে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা ও দল নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।  বর্তমান সময়ে শর্তগুলোকে এতগুণ কঠিন করা হয়েছে যে,এর লক্ষ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।’ 
বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন,‘নির্বাচন কমিশন হয়তো দলবিহীন গণতন্ত্র চাইছে বলে নতুন কোনও রাজনৈতিক দলকে আর নিবন্ধন দিচ্ছে না। অধিকাংশ নিবন্ধিত দলের চাইতে গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি সক্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলকে তারা নিবন্ধন দিচ্ছে না। অথচ প্রতিদিন এই দলগুলো নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে সক্রিয় আছে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি করে বলেন,‘নিবন্ধনের আইনটি করা হয়েছিল নামসর্বস্ব কর্মসূচিহীন দল যেন নির্বাচনে ব্যবহৃত না হয়।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,‘মানুষ ভোট  দেবে কিনা, সেটা ভোটারদের প্রশ্ন। নির্বাচনে দাঁড়ানো রুদ্ধ করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনকে কে দিলো? এক শতাংশ ভোটার-সমর্থকের স্বাক্ষর লাগার যে আইন করেছেন, রাতের বেলা সেই ভোটারের বাড়িতে যে পুলিশ বা মাস্তানরা ভয় দেখাবে না,তার
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী  ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যমে জানাচ্ছেন কোন কোন দলকে নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে বা প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে,তা বিধিবিধানের চরম লঙ্ঘন। সংশ্লিষ্ট দলটির সঙ্গে তাদের সমস্যা বা ত্রুটি নিয়ে তারা আলাপ করছেন না, বরং গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলছেন, অমুক অমুক মনোনীত হয়নি। এই প্রক্রিয়াটি সংবিধান ও আইনের এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। এর বিরুদ্ধে আমাদের মাঠের ও আইনি লড়াই করতে হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল,সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আক্তার। আলোচনায় আরও অংশ নেন— ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য , ইতিহাসবিদ আহমেদ কামাল, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূইয়া,বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম,বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ।