প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর এ নির্বাচন নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ ওঠায় উদ্বেগ বেড়েছে।’
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডা. হাছান মাহমুদ বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনও আমরা দেখেছি। ফ্লোরিডায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে কী হয়েছিল, আরও নানা কথাবার্তা আছে। সেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। অন্য দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা বা নির্বাচন নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে চাই না।’
‘পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩০ শতাংশ তৃণমূল প্রার্থী নির্বাচন ছাড়াই জয়লাভ করেছেন। নির্বাচনের সময় হাফ ডজনের বেশি মানুষ সহিংসতায় মৃত্যুবরণ করেছেন। সেখানকার তুলনায় গাজীপুর ও খুলনার নির্বাচন বহু সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ হয়েছে। এটির প্রশংসা করুন।’
মার্শা বার্নিকাটের এই মন্তব্যের কারণে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি সম্মানিত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রতি অনুরোধ জানাবো, আপনাদের যদি কোনও পরামর্শ বা বক্তব্য থাকে, সেটি আপনারা সরকারের সঙ্গে যখন বৈঠক হয়, তখন উপস্থাপন করুন। জনসমক্ষে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য রাখা সমীচীন নয়।’
তিনি বলেন, ‘গাজীপুর নির্বাচনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলো। বিএনপি এমন একজনকে প্রার্থী দিয়েছে, যাকে দুজনে ধরে উঠাতে হয়, আবার দুজনে ধরে নামাতে হয়। তার পরিবার আহসান উল্লাহ মাস্টারের খুনের সঙ্গে যুক্ত। যে প্রার্থী হাঁটতে-চলতে পারেন না, সেই প্রার্থীকে নিয়ে দল হাঁটতে-চলতে পারবে, এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘‘আজ বিশ্বব্যাংক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রশংসা করে। দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ সুখী। দেশের মানুষ সরকারের ওপর সন্তুষ্ট, কিন্তু একটি পক্ষ সন্তুষ্ট নয়। এরা কারা? এরা হচ্ছে বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের দলগুলো। আরও কিছু ব্যক্তি, যারা রাত ১২টার পর টেলিভিশনের পর্দা গরম করেন। যারা বুঝাতে চান তারা মহাজ্ঞানী। কোনও কিছু হলেই তারা সেখানে ভুল ধরেন। আমি ওদের নাম দিয়েছি ‘ভুল ধরা পার্টি’। এরা রাত ১২টার পর ভুল ধরা পার্টি। বিএনপি আর এই ভুল ধরা পার্টি খুশি না।’’
তিনি বলেন, ‘তারা আবার ডাক দিয়েছে জাতীয় ঐক্যের। কিন্তু নিজেদের দলের মধ্যে কোনও ঐক্য নেই। নিজের দলের নেতারা হাইকোর্টে বোরকা পরে হাজির হন। এমনই তাদের ঐক্য। জাতীয় ঐক্যের কথা চিন্তার আগে আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, নিজ দলের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করুন। আপনাদের পরাজয়ের অন্যতম বড় কারণও সেখানে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আগামী যে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে, ইনশাআল্লাহ সেখানেও আমরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবো।’
প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা আগামী নির্বাচনে ভালো করার জন্য দলকে গোছান, মানুষের কাছে যান। বিদেশিদের দুয়ারে ধরনা না দিয়ে জনগণের দুয়ারে ধরনা দেন।’
স্বাধীনতা পরিষদের উপদেষ্টা শিহাব রিফাত আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু প্রমুখ।