সর্বদলীয় ঐক্যে জামায়াতকে নেবেন না ড. কামাল

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আয়োজনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আইনজীবীদের করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ড. কামাল হোসেন

নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় ঐক্যে জামায়াত ইসলামী থাকছে না বলে জানিয়েছেন গণফোরামের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের করণীয় বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যে সর্বদলীয় ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়েছে সেখানে দল হিসেবে জামায়াত ইসলামী থাকছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন,‘না'। তাদের নেওয়া হবে না। এক কথায় উত্তর ‘না’।
সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য আছে এখন। কিছুদিন আগে আপনি বলেছিলেন জামায়াত থাকলে বিএনপির সঙ্গে আপনি ঐক্যে যাবেন না। আপনি আপনার সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন কিনা?
এর জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, দল তারা করতেই পারেন। আমরা যারা স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছিলাম তারা এক ভাবধারার, আর ওরা (জামায়াত ইসলামীর সমর্থকরা) অন্য চিন্তা করেছে। এটা নিয়ে তো বিরোধ নেই। তারা স্বাধীনতাবিরোধী কাজ করেছেন। দল হিসেবে করেছেন। এটাতো বলা যায় না যে ব্যক্তি হিসেবে করেছেন। জামায়াত নিয়ে আমি যতদূর জানি ওই দল থেকে মুক্তিযুদ্ধে পক্ষে কেউ কেউ ছিলেন। কারা কারা ছিলেন তা জানতে পারলে আমাদের কাজে লাগবে।
অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিক ড. কামাল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনার উদ্দেশে বলেছেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে আপনাকে পাওয়া যায় না। আপনার পকেটে সব সময় বিমানের টিকিট কাটা থাকে।
প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, একটি ব্যাপারে ২০০৭- ২০০৮ সালে আমরা মামলা করেছিলাম। মামলটি ছিল ভোটার লিস্টে ১ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটারের ব্যাপারে। সে মামলার পর ভোটার লিস্ট থেকে এসব ভুয়া ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছিল, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছিল। সর্বোপরি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে যখন আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান থেকে সরালাম তখন আমাদের চারজনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হলো। এরপর ২০১০ সালে সে মামলা থেকে আমরা মুক্ত হলাম। তখন তো আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাইনি। এসব ঘটনা না ঘটালে তো ২০০৮ এর নির্বাচন হতো না। আর হয়েও এই ফলাফলও হতো না যদি না ১ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার বাতিল না হতো।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ২০০৭ সালে ২৩ টি শর্ত দিয়েছিলেন। ওই শর্তগুলো এখনও প্রযোজ্য হতো যদি তিনি বর্তমানে বিরোধী দলে থাকতেন। বিরোধী দলে থেকে যখন শর্তগুলো সমর্থন করেছিলেন আশাকরি সরকারে থেকেও তিনি সমর্থন করবেন।

সংবিধানের অন্যতম এই প্রণেতা বলেন, সংবিধান প্রণয়ণের ৪৬ বছর পরে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সংবিধানের আরও কিছু সংশোধনী করা দরকার। এর মধ্যে কিছু ঘাটতি আছে।  উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এসব ঘাটতি কিভাবে পূরণ করা যায় সেগুলো লিখিত আকারে আপনারা দিন। এগুলো একত্রিত করে একটি কমিটি করে যেগুলো বিবেচনাযোগ্য সেগুলো তুলে ধরা হোক। এই সংশোধনের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করাও যেতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।