যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার দাবিকে আমলে নিচ্ছে না আ. লীগ

আওয়ামী-লীগ-পাভেলডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি ও নয়টি লক্ষ্যকে আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, এর ধরনের কোনও দাবি মেনে নেবে না সরকার। সংবিধান অনুযায়ীই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তবে, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ঘোষিত এই পাঁচ দফা দাবি ও নয় দফা লক্ষ্য আমলে না নিলেও সরকারবিরোধী দলগুলোর নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক জোটগঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক জোটগুলো চাইলে তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভাও করতে দেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের সরকারবিরোধী জোট—যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন।  এই পাঁচদফায় তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনের একমাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত, মোট ৪০ দিন প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং  নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এছাড়া, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ক্ষমতায় গেলে কী কী করা করবে, সে বিষয়ে নয়টি লক্ষ্যও ঘোষণা করেছে। এগুলো হলো, এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসান, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ; দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার; বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি; জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতি ও দলীয়করণ থেকে মুক্ত করা; বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা আনা; জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন; ‘সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’—এই নীতির আলোকে পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা এবং  প্রতিরক্ষা বাহিনীকে যুগোপযোগী করা।

এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, সংবিধানবিরোধী কোনও দাবি পূরণ করা সম্ভব হবে না। সংবিধান অনুযায়ী সব কিছু হবে। ফলে সরকারের কাছে কেউ কোনও দাবি তুলতে হবে না বলেও তারা মন্তব্য করেন।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংবিধানের আলোকে। কারও দাবি পূরণ করতে গিয়ে সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। ফলে দাবি নিয়ে এখনও আমরা ভাবছি না।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তফ্রন্টের দাবিগুলো সংবিধানের সঙ্গে কোনও ব্যত্যয় সৃষ্টি করে কিনা, তা দেখা হবে।’

প্রায় অভিন্ন মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফও। তিনি  বলেন, ‘যা কিছু হবে, সংবিধান অনুযায়ীই হবে। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনও দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না। যে জোট-ফ্রন্ট যে-ই দাবিই তুলুক, সেটা আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারক মহল আমলে নিচ্ছে না।’

জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে কোনও নৈতিক দাবি তুলতে হয় না। আবার অনৈতিক দাবি আদায় করাও সহজ নয়। আওয়ামী লীগ এসব দাবি আমলে নিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ীই একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।’

আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনও দাবি মানবে বলে সাফ জানিয়ে দিলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহও। তিনি বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে কারও কোনও দাবি আওয়ামী লীগের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’

সংবিধান অনুযায়ীই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে এক চুল নড়বে না সরকার।’