সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত প্রমাণ পাচ্ছি, সরকারের অনুগত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জেল কর্তৃপক্ষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে যে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়েছে তাতে কী। তার এই অসুস্থতা আরও চরম ও শোচনীয় পর্যায়ে যাক এবং তার শরীরের বড় ধরনের ক্ষতি হোক, এটাই হচ্ছে সরকারের মনের চাওয়া। আর এই চাওয়াটাকে পূরণ করার জন্যই এসব প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানো হচ্ছে।’
শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি নেই দাবি করে রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে এই হাসপাতালে বিশেষায়িত এমআরআই মেশিন নেই। এটা বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আছে। তাছাড়া উন্নত চিকিৎসার জন্য ভালো পরিবেশ দরকার, নিরপেক্ষ ডাক্তার দরকার, যা এখানে নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে সরকারি দলের অনুগত বোর্ড সদস্যরা সরকারের পছন্দ অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন। সেটিই প্রমাণিত হলো। দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য যদি ঝুঁকিপূর্ণ না হয়, তাহলে অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি এপাশ-ওপাশ হতে পারেন না কেন? একথা তো মেডিক্যাল বোর্ডই স্বীকার করেছে। তার অসুস্থতা নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের বক্তব্য স্ববিরোধী ও সরকারের চিন্তারই প্রতিফলন। সরকারি মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ একদেশদর্শী ও সর্বজনীন চিকিৎসা নীতির পরিপন্থী।’
পছন্দ অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া তার মানবাধিকার উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সেটি না করে কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক নিজেদের পছন্দের চিকিৎসকদের দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো চরম প্রতিহিংসা ও জেদের বহিঃপ্রকাশ। বেগম জিয়াকে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নিয়ে যাওয়ার জন্যই সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী মেডিক্যাল বোর্ড ‘ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিবেদন’ দিয়েছে। আর সেজন্যই তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।’
অবিলম্বে মেডিক্যাল বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করে এবং খালেদা জিয়াকে বেসরকারি কোনও বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করারও দাবি জানান রিজভী।
ক্রসফায়ারে হত্যা ও গুমের বিষয়ে পুলিশের একই রকমের বক্তব্য দেশবাসীর কাছে কখনও বিশ্বাসযোগ্য হয়নি বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘সিরাজ শিকদার থেকে শুরু করে সর্বশেষ ক্রসফায়ারে হত্যা এবং ছাত্রদল নেতা রনির গুমে পুলিশের বক্তব্যের মধ্যে একই কাহিনিরই পুনরাবৃত্তি। ভোটারবিহীন সরকার ‘ভয় দেখিয়ে জয় করার কৌশল’ অবলম্বন করতে গিয়েই চালানো হচ্ছে বিচারবহির্ভূত হত্যার মহোৎসব ও গুমের মহাধুমধাম।’
বিএনপির ওপরে নির্বিচারে হামলা, মামলা, গ্রেফতার, দমন-পীড়নে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার হরণের ছায়া পড়তে শুরু করেছে বলে দাবি করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘একটা নির্জন বিরানভূমিতে সরকার একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করছে। কিন্তু দেশের ১৬ কোটি মানুষের আত্মশক্তিকে ভুলে গেছে সরকার। স্বৈরাচারকে বেশি দিন সহ্য করার ইতিহাস নেই এই দেশের মানুষের। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতেই হবে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। আর সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন খালেদা জিয়া।