আরও একটি বিশেষ কমিটি করতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

জোটের শরিকদের প্রতিনিধিরা

লিয়াঁজো কমিটির পাশাপাশি উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষ কমিটি করতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটের অন্তর্ভুক্ত শরিক চারটি দলের নেতারাই মনে করেন- কৌশল ও জোটের নীতি নির্ধারণ করতে শীর্ষনেতাদের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন, যে কমিটির সদস্যরা জোটের নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে আর তা বাস্তবায়নে লিয়াঁজো কমিটি কাজ করবে। বুধবার (১৭ অক্টোবর) রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রায় দেড়ঘণ্টার বৈঠকে জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নীতি নির্ধারণ ও কর্মসূচি প্রণয়নে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থানে পৌঁছেছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তারা মনে করেন, জোটের শরিক দল বিএনপি, জেএসডি, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ও নাগরিক ঐক্যের শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে একটি সুপ্রিম কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এই কমিটির সদস্যরা জোটের ভবিষ্যৎ নীতি, কৌশল, রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং কর্মসূচি প্রণয়ন করবেন। এরপরই লিয়াঁজো কমিটি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করবে। ইতোমধ্যে লিয়াঁজো কমিটি গঠন চূড়ান্ত পর্যায়ে। বিএনপি ও গণফোরাম তালিকা দিলেই লিয়াঁজো কমিটি গঠিত হবে। আগামী ১৯ অক্টোবর জোটের তৃতীয় বৈঠকে এ কমিটি চূড়ান্ত করা হবে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মধ্যে একজন; গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মনসুর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনসহ আরও কয়েকজন থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে ড.কামাল হোসেনকে নিয়ে। তিনি এই কমিটিতে থাকতে অপারগতা জানিয়েছেন। তার দলের পক্ষ থেকে বুধবার রাতেও জোটের বৈঠকে তা অবহিত করা হয়। যদিও অন্য শরিক দলগুলো এই প্রস্তাব মেনে নিতে চাইছেন না। তারা মনে করছেন, ড. কামাল হোসেনকেও উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে রাখতে হবে এবং তাকে এখানে বেশি প্রয়োজন।

গণফোরামের তরফ থেকে বৈঠকে বলা হয়েছে, ড. কামাল হোসেন বয়স্ক মানুষ। শারীরিকভাবেও অসুস্থ। তার পক্ষে জোটের বৈঠকগুলোতে অংশ নেওয়া কঠিন। যদিও জোটের বাকি দলগুলোর নেতারা মনে করছেন- ড. কামাল হোসেন অসুস্থ থাকলে ও তার বাইরে যাওয়ায় সমস্যা থাকলে, প্রয়োজনে তার বাসায় বা তার মতিঝিলের চেম্বারে বৈঠক হবে। তবুও তাকে রেখেই উচ্চপর্যায়ের কমিটির করতে মতামত শরিকেদের।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. জাহেদ উর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জোটের কর্মসূচিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে নানা বিষয় প্রাসঙ্গিক ছিল।’

বৈঠক সূত্র জানায়- এই মাসে সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে সমাবেশ করার পর দ্বিতীয় ধাপেই দেওয়া হবে রোডমার্চ। তবে কোন প্রক্রিয়ায় দেওয়া হবে, এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি। জোটের একজন নেতার ভাষ্য, ‘আমরা দ্রুত মানুষের কাছে যেতে চাই। মাঠে নামতে চাই। সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতেই রোডমার্ডের আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায়, দ্বিতীয় ধাপেই এ কর্মসূচি দেওয়া যাবে।’

সূত্র বলছে, জোটের দ্বিতীয় বৈঠকে আগামী ২০ বা ২১ অক্টোবরের দিকে নাগরিক সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করার চিন্তা করা হচ্ছে। ১৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকালেও জোটের নেতারা বসছেন ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে, যেখানে জোটের নেতারা তুলে ধরবেন দেশের পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন ও সরকারের আচরণ। এই মতবিনিময়ে জোটের পক্ষ থেকে মূল ব্রিফ করবেন ড. কামাল হোসেন। তিনি জোটের লক্ষ্য, দাবি ও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে জোটের অবস্থান তুলে ধরবেন। এরপর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন জোটের বাকি শীর্ষ নেতারা।

জানা গেছে, লিয়াঁজো কমিটি গঠন হবে আগামী শুক্রবার। আজকের বৈঠকে জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য তাদের প্রতিনিধিদের নাম দিয়েছে। তবে গণফোরাম ও বিএনপি দেয়নি। বিএনপির তরফে জানানো হয়েছে, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করা হবে। এক্ষেত্রে আগামী এক বা দুদিনের মধ্যে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য বৈঠকে বসতে পারেন। গণফোরামও ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিনিধি চূড়ান্ত করবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পাশাপাশি আমরা দুটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ৩০ অক্টোবর রাজশাহীতে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত  নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।’ দ্রুতই লিয়াঁজো কমিটির সদস্যদের নাম জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।