আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করবো: মির্জা ফখরুল

বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসভবনে ব্রিফিং করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরজাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি যদি সরকার না মানে, আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করবো।’ বুধবার (৭ নভেম্বর) গণভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের পর বেইলি রোডে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। কিন্তু সরকার যদি সে পথে না আসে, সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে একটা জায়গায় পৌঁছাতে না চায়, তাহলে তার দায়দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তাবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি এ বিষয়ে আরও আলোচনা চালিয়ে যেতে চাই। সরকার বলেছে, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে এই আলোচনার কোনও সম্পর্ক থাকবে না। প্রয়োজনে তফসিল রিসিডিউলও করা যেতে পারে।’ এ সময় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘তফসিল ঘোষণা করতে আমরা মানা করেছি। এরপরও যদি তারা করে, নিশ্চয় আমরা পছন্দ করবো না। তাহলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করবো। আমরা আমাদের মতো করে বলেছি, তফসিল রিসিডিউল করা যেতে পারে। আমরা সেই দাবিই তুলেছি।’

সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফলপ্রসূ হলো কিনা, তা তো আলোচনা শেষে বোঝা যাবে। আলোচনা তো অব্যাহত আছে।’ সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আশার আলো দেখছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনগণ যদি দেখে, তাহলে আশার আলো দেখা হবে। কাল আমরা রোডমার্চ করে রাজশাহী যাচ্ছি, পরশু সেখানে জনসভা করবো।’

ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির কয়টি সরকার মেনে নিয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা পুরোটাই বিবেচনা করবো। যখন পুরো বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, তখন আপনাদের জানাবো।’

খালেদা জিয়ার কারামুক্তি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে অবশ্যই আলোচনা হয়েছে। সে ব্যাপারে আমরা বলেছি, তিনি তো আইনগতভাবেই জামিনে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য।’

সংলাপ শেষে বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসভবনে ঐক্যফ্রন্টের প্রেসি ব্রিফিংনির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই বিষয়টা আমরা বলেছি। আমরা যেহেতু বলেছি সংসদ ভেঙে দিতে হবে, তো সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিন পরেই তো নির্বাচন হবে।’ তিনি বলেন, ‘সংসদ ভেঙে দেওয়াটা সংবিধানের অন্তর্গত। এখনই আমাদের সংবিধানে আছে, একইসঙ্গে দুটি সংসদ থাকবে, এটা তো কোনও নিয়ম হতে পারে না। তারা যদি বলেন, সংসদ ভেঙে দেওয়া সম্ভব না, তাহলে তারা ভুল বলেছেন। সাংবিধানিকভাবেই আমরা প্রস্তাব করেছি। সেক্ষেত্রে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিন পরেই নির্বাচন হতে হবে। এটাই কথা।’ এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি।’

সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবিতে সরকার রাজি হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা বলেছেন, আলোচনা হতে পারে। আমরা কালকেই ঘোষণা দিয়েছি, সাত দফা দাবিতে রোডমার্চ করবো। কাল যদি তফসিল ঘোষণা করা হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করবো।’ এ সময় মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন আর কোনও মামলা হবে না, আর কোনও গ্রেফতার হবে না।’

সরকারের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো নিয়ে সরকারের কাছে গিয়েছি। সরকার বলেছে, তারা ভবিষ্যতে এগুলো নিয়ে আলোচনা করে দেখবে। আলোচনার সুযোগ আছে। সেটুকু থাকবে। আমাদের দাবি নিয়ে জনগণের যাচ্ছি, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে আমরা দাবি আদায়ের চেষ্টা করবো।’ আন্দোলন সংঘাতের দিকে যাচ্ছে কিনা, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এর দায় তো সরকারের।’ এ সময় ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বল সরকারের কোর্টে।’

নির্বাচন পেছানো প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সিডিউল পেছানোর দাবি করছি একটি অর্থবহ নির্বাচনের জন্য।’

ছবি: নাসিরুল ইসলাম