ঢাকা-১৮ ও ১২ আসনে আওয়ামী লীগ সরব, বিএনপি নীরব

সোমবার রাতে প্রচারণায় সরগরম আওয়ামী লীগের একটি অফিসঢাকা-১৮ ও ১২ আসনে নির্বাচনি প্রচারণায় আওয়ামী লীগ সরব থাকলেও বিএনপি অনেকটাই নীরব। আসন দুটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিএনপির স্থায়ী দলীয় কার্যালয় ও অস্থায়ী নির্বাচনি ক্যাম্পও নেই। তবে, পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় কয়েকটি কার্যালয় পাওয়া গেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) আসন দুটি ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় অনেকটাই সরব আওয়ামী লীগের অফিসগুলো। স্থানীয়রা বলছেন, ঢাকা-১৮ ও ১২ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণাই বেশি। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের কোনও প্রচার-প্রচারণা তারা দেখেছেন না। বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানাভিত্তিক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাধিক কার্যালয় থাকলেও বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কোনও কার্যালয় নেই। স্থানীয়রা জানান, আগে এসব এলাকায় বিএনপির যেসব কার্যালয় ছিল, সেগুলোর মধ্যে দুই-একটি কার্যালয় থাকলেও বাকি কার্যালয়গুলোর কোনও হদিস নেই।

ঢাকা-১৮ আসন

এই আসনের উত্তরখান মাজার এলাকায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তরখান থানা কার্যালয় ও উত্তরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় রয়েছে। এই দুটি কার্যালয় প্রায় পাশাপাশি অবস্থিত। নেতাকর্মীরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের প্রচার-প্রচারণার কাজ করছেন। পাশাপাশি উত্তরখান এলাকার অস্থায়ী নির্বাচনি ক্যাম্পগুলোতে ভোটার লিস্ট ও কর্মীদের কাজের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও এলাকাভিত্তিক নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন নেতারা। 

উত্তরখান থানা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসএদিকে, উত্তরখান আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের প্রায় ৫০-৬০ গজ দূরে মাজার রোডে পরিত্যক্ত ও তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে বিএনপির উত্তরখান থানা কার্যালয়টি। এর সামনে দোকান খুলে বসেছেন স্থানীয় সবজি বিক্রেতারা। এখানে বিএনপির কোনও প্রচারণা নেই।

উত্তরখান এলাকার ভোটার সোলায়মান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ বিএনপির এই কার্যালয়টি এভাবেই বন্ধ হয়ে আছে। দলটির কোনও নেতাকর্মী এসে কার্যালয়টি কখনও খোলেনি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। এখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর কোনও প্রচারণাও নেই। তারা কেউ আমাদের কাছে এখনও ভোট চাইতেও আসেননি। আমরা সাহারা খাতুনকে চিনি ও জানি। তিনি অতীতে এলাকার উন্নয়নও করেছেন। সবকিছু বিবেচনা করে আমার ভোট আমার পছন্দের প্রার্থীকেই দেবো।’ 

বিএনপির একটি অফিসদক্ষিণখান ও কাওলা এলাকায় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের কোনও কার্যালয় দেখা যায়নি।

উত্তরা রাজলক্ষ্মীর পেছনে রয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের প্রধান কার্যালয়। এখানে উত্তরা ১-১০ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যক্রম চলে। কার্যালয়ে থাকা উত্তরা ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম বুলবুল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনও নেতাকর্মী নেই। তাদের কোনও নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণাও দেখা যায় না। আমাদের এই আসনে সব দলের প্রার্থীদের পক্ষের লোকজন শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর কোনও প্রচারণা আমরা এখনও দেখিনি। আমরা আমাদের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাহারা খাতুনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।

খিলক্ষেত এলাকায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কার্যালয় দেখা গেলেও এই এলাকায়ও বিএনপির কোনও কার্যালয় দেখা যায়নি। 

শিল্পাঞ্চল থানা আওয়ামী লীগের অফিসস্থানীয়রা জানান, খিলক্ষেত এলাকায় ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের পোস্ট অফিস রোডে বিএনপির একটি কার্যালয় আগে ছিল। তাদের দাবি, গত ১০ বছর এই এলাকার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে। রেলওয়ে তাদের সীমানা নির্ধারণের জন্য কয়েকবার কাজ করেছে।

ঢাকা-১৮ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকের শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকের আনোয়ার হোসেন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) বাঘ প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম, মুসলিম লীগ-বিএমএল হাত (পাঞ্জা) প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম স্বপন, ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ’র টেলিভিশন প্রতীকের প্রার্থী আতিকুর রহমান নাজিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতীকের মাসুম বিল্লাহ ও ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী আবদুল মোমেন।

ঢাকা-১২ আসন

এই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্বাচনি প্রচারণা এগিয়ে রয়েছে। এছাড়া তার প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালালেও বিএনপির  প্রার্থীর কোনও প্রচার-প্রচারণা দেখা যায়নি। 

পরিত্যক্ত অবস্থায় বিএনপির একটি অফিসআসনটির শিল্পাঞ্চল-তেজগাঁও-শেরেবাংলা নগর ও রমনার প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কার্যালয় দেখা গেলেও বিএনপির কোনও কার্যালয় দেখা যায়নি। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার দক্ষিণ বেগুনবাড়িতে ঢাকা মহানগর যুবদলের একটি কার্যালয় একেবারে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। দীর্ঘদিন এই কার্যালয়টি পরিত্যক্ত থাকার কারণে তার সামনে ফল ব্যবসায়ীরা বসেছেন। এছাড়া বিএনপির কোনও নেতাকর্মীকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর প্রচারণা চালাতেও দেখা যায়নি। 

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার দক্ষিণ বেগুনবাড়ীর স্থানীয় ভোটাররা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা-১২ আসনে নৌকার প্রচারণাই বেশি। সবখানেই নৌকার নেতাকর্মীরা রয়েছেন। অন্যান্য প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে দেখা গেলেও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম নীরবের কোনও প্রচার-প্রচারণা নেই।’

খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ঢাকা-১২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম নীরব, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কোদাল প্রতীকের প্রার্থী জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি (জোনায়েদ সাকি), জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নাসির উদ্দিন সরকার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী শওকত আলী হাওলাদার ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতীকের প্রার্থী শাহীন খান।