ড. কামালকে অভিনন্দন, বিএনপিকে সংসদে যাওয়ার আহ্বান বি. চৌধুরীর



ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীজামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করবেন না—এমন মন্তব্য করায় ড. কামাল হোসেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রবিবার (১৩ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘তিনি (ড. কামাল) জামায়াতিদের সঙ্গে রাজনীতি করবেন না, আমাদের রাজনীতির সঙ্গে বিলম্বে হলেও ঐকমত্য পোষণ করায় তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ একই সঙ্গে বিএনপিকে সংসদে অংশগ্রহণ করারও আহ্বান জানান বি. চৌধুরী।

যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ মনে করে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য এখনও যারা স্বাধীনতাবিরোধী তাদের চূড়ান্ত উপলব্ধির সময় এসেছে।’
বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপিকে সরকারের ভুলত্রুটি এবং নিজেদের ভুলত্রুটি তুলে ধরার জন্য সংসদে বসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য প্রতিধ্বনি করে আমিও বলবো—বিএনপির উচিত হবে সংসদে বিরোধী দল হিসেবে তাদের সঠিক ভূমিকা রাখা। নিজেদের ভুল-ত্রুটি এবং সরকারের ভুল-ত্রুটি সম্পর্কে সংসদে সাহসী উচ্চারণের মাধ্যমে বিএনপি সঠিক ভূমিকা রাখতে পারে। এটা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার জন্য অপরিহার্য।’
বি. চৌধুরী বলেন, ‘সঠিকভাবে গণতন্ত্রের চর্চা না হলে এবং সংসদকে এই গণতন্ত্রিক চর্চার মূল কেন্দ্র হিসেবে প্রমাণিত করতে না পারলে, সংসদে বিরোধী দল যোগদান না করলে, একদিকে বিরোধী দলের ভবিষ্যৎ, অন্যদিকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।’
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারার নবনির্বাচিত এমপিদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আমি মনে করি, সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের সঙ্গে সঙ্গে বিকল্পধারা বাংলাদেশের ‘শান্তি-সুখের রাজনীতি’, ‘ঘৃণার পরিবর্তে শ্রদ্ধার রাজনীতি’, ‘ক্ষমতার রাজনীতির বদলে দায়িত্ববোধের রাজনীতি’— এগুলোর সপক্ষে সংসদে বারবার উচ্চারণ করে বাংলাদেশের মানুষকে ইতিবাচক রাজনীতির পক্ষে জাগিয়ে তুলতে সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’
বি. চৌধুরী আরও বলেন, ‘অন্যদিকে বিকল্পধারার অনেক মৌলিক, বাস্তবমুখী, গণমুখী এবং ভবিষ্যৎমুখী নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন করার জন্য আলোচনা, সমালোচনা এবং আইন প্রণয়নে মনোযোগী হতে হবে। আমরা একটি সক্রিয় সংসদ চাই।’ তিনি বলেন, ‘জীবনের শেষ মুহূর্তে সুন্দর স্বপ্ন বাস্তবায়ন দেখে যেতে চাই।’
তিনি মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারার সব নেতাকর্মীকে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান।
বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের কিছু ভুলের কারণে সারাদেশে বিকল্পধারা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। কিন্তু আমাদের বিএনপি ছেড়ে আসা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। বিএনপি বলেছিল, বটগাছের দুটি পাতা গেলে আর কী হবে! আজ সেই বটগাছ কোথায়? স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে আরও আগেই ১৪ দলের সঙ্গে নির্বাচনে আসা উচিত ছিল আমাদের। তাহলে দল আরও সংগঠিত হতো।’
মাহী বি. চৌধুরী ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল, আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের পটভূমি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘ড. কামালকে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষয়ে লিখিতভাবে জানানো সত্ত্বেও ওই নেতাদের বোধোদয় হয়নি। এখন ড. কামাল বলছেন ঐক্যফ্রন্টে জামায়াত আছে, তা তিনি জানতেন না।’
মাহী বলেন, ‘২০০৪ সালে আমি বিকল্পধারা থেকে এমপি হয়ে সংসদে যাওয়ার পর আমাকে এক মিনিটের জন্যও কথা বলতে দেওয়া হয়নি। দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও আমাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ ১৪ বছর পর সংসদে যাবো, ইতিহাসের কথা বলবো, কীভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে, কীভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। কথাগুলো এবার সংসদে দাঁড়িয়ে বলতে হবে যাতে আমাদের সন্তানেরা এবং পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া একসময় বলেছিলেন, ষড়যন্ত্রের শিকড় কেটে দিয়েছি। কিন্তু কী ষড়যন্ত্র হয়েছিল তিনি তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।’